আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন। স্বল্প সময়ের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নজর কেড়েছিলেন অনেকের। চাকরি জীবন থেকে তিনি সৎ অফিসার হিসেবে পরিচিত তিনি। রাজনীতিতেও সে ধারা বজায় রাখার বিষয়ে প্রত্যয়ী হন।
তিনি বলেন, লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নীতির সঙ্গে মানুষের কল্যাণে সারাজীবন কাজ করেছি। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করেছি। দুর্নীতির সঙ্গে কখনো আপোষ করিনি।
ফেনী-১ আসনের নেতাকর্মীরা জানান, আলাউদ্দিন নাসিম নিরহংকার মানুষ। অত্যন্ত বন্ধুবৎসল ও অতিথিপরায়ণ। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি সবসময় সামনে থেকেছেন।
আলাউদ্দিন নাসিম ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি (১৯৮৪-৮৬) ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষ করে বিসিএস পাস করে সিভিল প্রশাসনে যোগদান করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর ২০০১ সাল থেকে বিরোধী দলীয় নেতার এপিএস হিসেবে যোগদান করেন। ১/১১ সরকার দুর্নীতিবাজের তালিকায় তার নামও প্রকাশ করলে নৈতিক কারণে ২০০৮ সালে সরকারের উপসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নৈতিক কারণে পদত্যাগের ঘটনা দেশের ইতিহাসে বিরল।
আলাউদ্দিন নাসিম চাকরি থেকে পদত্যাগের পর ব্যবসায়ী হিসেবে তার নতুন কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বলেন, ১৬ বছর নিয়মিত কর প্রদান এবং নিয়মিত সব হিসাব-নিকাশ দাখিল করেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও ২০২৪ সালের আগে গত ১৬ বছর সরকার বা দলের কোনো পর্যায়ের কোনো অবস্থানে ছিলামা না। বিশেষ করে যেসব জায়গা থেকে অনিয়ম বা দুর্নীতির সুযোগ আছে। চাকরি থেকে পদত্যাগের পর নিভৃত জীবনযাপন বেছে নিয়েছি এবং নিজের কাজ করার চেষ্টা করছি।
আলাউদ্দিন নাসিমের পরিবার এ দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমল থেকে। ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ তাদের পরিবারের প্রতিষ্ঠা করা। ফেনীতে পারিবারিক অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাসপাতাল, স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করেছেন।
চাকরী ও রাজনৈতিক জীবনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে আলাউদ্দিন নাসিম বলেন, রাজনৈতিক ও চাকরি জীবনে কখনও দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করিনি। কখনও কারো কাছ থেকে কোনো অনৈতিক সুবিধা নিইনি। তারপরেও ওয়ান ইলেভেনের সময়ে আমার বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা করে। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা হলেও তদন্তে এর সত্যতা পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্তে সস্ত্রীক অব্যাহতি পাই।
সরকারের সাবেক উপসচিব আলাউদ্দিন নাসিমের বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার পরিবারে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শহিদ মুক্তিযোদ্ধাসহ একাধিক শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ জনেরও অধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো সময় তার পরিবারের সদস্যরা ত্রিপুরার বিলোনিয়া মহকুমার মতাই থানার কৃষ্ণপুর কলোনিতে ছিলেন।
তিনি বলেন, ফেনীতে দলমত নির্বিশেষে সবার সম্মান পেয়েছি। রাজনীতিতে গডফাদার হতে চাইনি। আজীবন গণমানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আলাউদ্দিন নাসিম তার নির্বাচনী আসনের উন্নয়নের চেষ্টা করেন। এ সময় ফেনীর দুঃখ হিসেবে পরিচিত মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ টেকসই বাঁধ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেন। ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন পুণরায় চালু করার উদ্যোগ নেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, পুল কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধন করবেন এমন নির্দেশনা দেন।