ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে ১২ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে দুর্গত অনেক এলাকায়। গত দুই দিনে ৪ জেলায় মারা গেছেন অন্তত ৮ জন।
টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নামা ঢলের পানিতে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। দেশের ১২ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলাগুলো হলো– ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।
বৃষ্টির পানি আর বানে তলিয়ে আছে নোয়াখালী সদরসহ ৭ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। শহরের বেশির ভাগ এলাকাও জলমগ্ন। ডুবে আছে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক। জেলায় পানিবন্দি প্রায় ২০ লাখ মানুষ। বাড়িঘরে পানি ঢোকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন বহু মানুষ। দুর্গত অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, আদর্শ সদর ও বুড়িরচং উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা তলিয়েছে বানের জলে। গতরাতে বুড়িরচং উপজেলায় বুড়বুড়িয়ায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা। চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দুর্গত অঞ্চলের মানুষের দিন কাটছে চরম ভোগান্তিতে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ।
চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ভাসছে বানের জলে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অব্স্থা হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে। হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে হাটহাজারীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর পাশাপাশি বানভাসী মানুষের পাশে দাড়িয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির বিস্তীর্ণ এলাকাও তলিয়ে আছে পানিতে।
মৌলভীবাজারে মনু ও ধলাই নদের পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কমলগঞ্জ এবং রাজনগর উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকে ধীরগতিতে পানি নামছে। এখনও পানিবন্দি লাখো মানুষ। বানের জলে ডুবে আছে রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট।
এদিকে, হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানিও কিছুটা কমেছে। শহরতলির নিচু এলাকা এখনও জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে।