ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। এর মাঝেই সোমবার দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘‘বিনাশকারী’’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেছে। বিজেপি বলেছে, ভয়াবহ এই ঘটনার পর লোকজন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ‘‘নির্মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’’ করেছে। সোমবার দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন মমতা বিনাশকারী হয়ে উঠেছেন। নিজ অপকর্মের মাধ্যমে একজন নারীদের মর্যাদা ধুলিস্যাৎ করেছেন; যিনি চিকিৎসক হিসেবে সমাজের সেবা করছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আইনের শাসন ধ্বংসকারী বলে অভিযোগ করেছেন ভাটিয়া। তিনি বলেন, নৈরাজ্যবাদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই জঘন্য অপরাধের প্রমাণ ধ্বংসকারী… তিনি নিজে অথবা কমিশনের মাধ্যমে এই কাজ করেছেন। তিনি আমাদের দেশের সংবিধানের ধ্বংসকারী।
তিনি বলেন, কারণ মুখ্যমন্ত্রী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষকে রক্ষা করছেন; যার কাজ ছিল ছাত্রদের রক্ষা করা এবং এখানে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত নাকে তাকে পুরস্কৃত করেছেন এবং তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির এই মুখপাত্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় একজন নারীর আত্মমর্যাদা ধ্বংস করেছেন। তিনি যে সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষা করার শপথ করেছিলেন তা ধ্বংস করেছেন। তিনি আইনের শাসন এবং শেষ পর্যন্ত মামলার প্রমাণ ধ্বংস করছেন।
এদিকে, মমতা বন্দোপাধ্যায় তার বিরুদ্ধে রাজ্যের বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও বিজেপি ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন। আরজি কর হাসপাতালে জনতার ভাঙচুরের একদিন পর তিনি বলেছিলেন, তারা বাংলায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। এই অশান্তির জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তবে রাজ্যের এই দুই বিরোধীদল হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনাকে চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রমাণ ধ্বংস করার প্রচেষ্টা বলে নিন্দা জানিয়েছে।
গত ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে (৩১) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ভারত। সোমবারও কলকাতায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিপুলসংখ্যক কর্মী।
নিহত চিকিৎসকের মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা। এতে বলা হয়েছে, তার শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। মাথা, গাল, ঠোঁট, নাক, ডান চোয়াল, চিবুক, গলা, বাম হাত, বাম কাঁধ, বাম হাঁটু, গোড়ালি এবং যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, চিকিৎসকের ফুসফুসে রক্ত জমাট (হেমারেজ) বেঁধেছিল। শরীরে আরও কিছু অংশেও জমাট বেঁধে ছিল রক্ত। আরজি করের ওই চিকিৎসককে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামতও পাওয়া গেছে। এছাড়া তার যৌনাঙ্গে জোরপূর্বক কিছু প্রবেশ করানোর কথাও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে।