রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) প্রবাহ বাড়াতে এই খাতের নগদ প্রণোদনা শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। প্রণোদনার নতুন হার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ফলে এখন থেকে ১০০ টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীদের স্বজনরা মোট ১০২ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন। নতুন বছর থেকেই এ হার কার্যকর।
গতকাল শনিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ ১ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পাঠানো ওই আদেশে বলা হয়, জনগণের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, অর্থ পাচার প্রতিরোধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গুরুত্ব বিবেচনায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষের কষ্টার্জিত আয় বৈধ উপায়ে দেশে পাঠাতে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই বর্ধিত হার কার্যকর করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৬০০ কোটি (২৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্সের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে। রেমিট্যান্সের লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে প্রণোদনা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার দরকার ছিল।
গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ’-সম্পর্কিত চূড়ান্ত সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় স্মারক অনুষ্ঠানের প্রি-ইভেন্ট সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
গত ৬-৭ মাস ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২১ শতাংশের মতো কমেছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। ফলে রেমিট্যান্সের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে আরও ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার দরকার হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা রেমিট্যান্স পাচ্ছিলাম না। কারণ সেটা ইনফরমাল চ্যানেলে চলে যাচ্ছিল। সেই চ্যানেলটাকে অনুৎসাহিত করব এবং ফরমাল চ্যানেলেই পুরোটা অর্জন করতে চাই।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে আমি স্টাডি করেছি। ওই সময় আমাদের রেমিট্যান্স যা অর্জন করার কথা, আমরা ৪৯ শতাংশ অর্জন করতাম ফরমাল চ্যানেলে আর ইনফরমাল চ্যানেলে বাকিটা আসত। আমি চিন্তা করলাম এটাকে ফরমাল চ্যানেলে আনলে আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং সবাই এটার বেনিফিট পাবে। সেই চিন্তা থেকে আমরা প্রথম ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করি।’
কামাল আরও বলেন, ‘আমাদের যে উদ্দেশ্য সেটি সফল। আমাদের গড় রেমিট্যান্স ছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। প্রণোদনা দেওয়ার পর প্রথম বছরে রেমিট্যান্স বেড়ে হলো ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এরপর আমাদের রেমিট্যান্স আরও বেড়ে যায় এবং ২০২০-২১ সালে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।’
রেমিট্যান্স পাঠাতে যে খরচ হয়, প্রণোদনা সেটি কভার করতে পারছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রণোদনা বাড়িয়ে দেওয়ায় প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কাভার হবে। এতে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হবে।’