বর্তমান বিশ্বে অল্প বয়সে গর্ভধারণ বা টিনএজ পেগনেন্সি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। এটি মা ও শিশু দুজনের শরীরের ওপরই বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। আন্তর্জাতিকভাবে যারা ২০ বছরের নিচে গর্ভধারণ করে তাদেরকে টিনএজ প্রেগনেন্সি বলা হয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে গর্ভধারণ করাকে টিনএজ প্রেগনেন্সি বলা হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ১ মিলিয়ন কিশোরী যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে তারা প্রতি বছর বাচ্চা প্রসব করে থাকে। তাছাড়া ইউনিসেফের হিসেব মতে, তৃতীয় বিশ্বের দেশে প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ১ জন জন্ম নেয় কিশোরী মায়ের গর্ভে।
তাছাড়া, বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, ৯৫ শতাংশ কিশোরীর গর্ভধারণ স্বল্প-আয় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেখা যায়। বাল্যবিবাহ, দারিদ্র্য, অপর্যাপ্ত শিক্ষা , গ্রামীণ বাসস্থান ও গর্ভনিরোধক কম ব্যবহার করা কিশোরী গর্ভধারণে বেশ অবদান রাখে। অন্যদিকে, উন্নত দেশের জন্য পর্নোগ্রাফি এবং বিবাহপূর্ব যৌন আচরণ কিশোরী গর্ভধারণের বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
অথচ এ বয়সি কিশোরীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মাতৃত্বের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয়। যখন একজন কিশোরী মা হয় তখন এর প্রভাব পড়ে শরীর, আবেগ ও তার সামাজিক জীবনের ওপর। যার ফলে মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে অল্প ওজনের শিশু ও যৌনরোগসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।
কিশোরী গর্ভধারণ এবং এসটিআই প্রতিরোধের জন্য যৌনাচার বর্জন শিক্ষা কার্যক্রম হলো সবচেয়ে কার্যকরী এবং স্বাস্থ্য-উন্নয়নকারী উপায়। উদ্যোগটি যুবকদের যৌনবিরত থাকার বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে তোলে। কিশোরী গর্ভধারণ প্রতিরোধ একটি সম্মিলিত দায়িত্ব এবং চিন্তা, যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং সুস্থ জীবনের জন্য সমাজের প্রতিটি সদস্যের অংশগ্রহণের প্রয়োজন।
তাছাড়া, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি প্রতিরোধ এবং মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউএনএফপিএ যৌথভাবে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয় এবং ২০ বছরের আগে গর্ভধারণ নয়। তবে অল্প বয়সে বিয়ে হলেও জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া। যাতে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ না হয়।
এদিকে, কিশোরী গর্ভধারণ প্রতিটি সমাজের একটি প্রধান মহামারি ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা। তাই ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের সবারই জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে উদ্যোগ নিয়ে কিশোরী গর্ভধারণ প্রতিরোধে অবদান রাখা।