জীবনানন্দ বলেছিলেন ‘যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙের, মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা’।
বাংলাদেশের মত সীমিত সুযোগের দেশে সদ্য স্কুল-কলেজ পেরোনো ছেলেমেয়েগুলোর জন্য সম্ভবত এটা খুব নির্মম একটা সত্য হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের চাপিয়ে চেয়া চাহিদা আর সমাজের চাপে অনেকেরই হয়তো আর জীবনের স্বাদ নেয়া হয়না। ডেড পোয়েটস সোসাইটি আমাদেরকে সেরকম একটি আখ্যানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
ডেড পোয়েট সোসাইটির মুক্তিকাল ১৯৮৯ সাল। প্রায় ২০ বছর আগের ছবি হয়েও এখনও এটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এই ডেড পোয়েটস সোসাইটি মুভিটি একটা স্কুল, তার ছাত্র আর একজন ভিন্নধর্মী শিক্ষককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় স্বপ্ন আর বাস্তবতার টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে। তবে সাহিত্য বিশেষত কবিতার মধ্য দিয়ে যে দর্শনের সাথে এইখানে আমরা পরিচিত হই তার স্বাদটা অনন্য।
শিক্ষামূলক ও প্রেরণাদায়ক এই ড্রামা/কমেডি ১৯৯০ সালের ৬২তম একাডেমি পুরস্কারের আসরে জিতে নেয় মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার।
চলুন জেনে নেই ডেড পোয়েটস সোসাইটির জানা ও অজানা ১০ তথ্য—
১। চিত্রনাট্যকার টম শ্যুলম্যান মন্টগোমারি বেল একাডেমিতে (যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিল, টেনেসিতে) অধ্যয়নের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করেইএই চিত্রনাট্য রচনা করেন। জন কিটিং চরিত্রটি তাঁর সেই সময়কার শিক্ষক প্রফেসর স্যামুয়েল এফ পিকারিং জুনিয়রের আদলে সৃষ্টি।
২। উপন্যাস থেকে তো অনেক সিনেমা হয়েছে। তবে ডেড পোয়েটস সোসাইটির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি উল্টো। মৌলিক চিত্রনাট্য থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ার পর ন্যান্সি ক্লাইনবাম একই শিরোনামে উপন্যাস রচনা করেন। অর্থাৎ প্রথমে মৌলিক চিত্রনাট্য, তারপর চলচ্চিত্র, অবশেষে উপন্যাস—উল্টো পথেই শ্যুলম্যানের কাজের বিবর্তন ঘটেছে।
৩। ওয়াল্ট হুইটম্যানের ‘ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেন!’ কবিতার বিখ্যাত লাইনটি ডেড পোয়েটস সোসাইটি চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়। এই লাইনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন রবিন উইলিয়ামস। ২০১৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন সংবাদপত্র কবিতার ওই অংশটুকু ব্যবহার করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
৪। জন কিটিং চরিত্রে রবিন উইলিয়ামসের অভিনয়শৈলী তাঁকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। নির্মাতা পিটার ওয়্যারের সান্নিধ্য আর ডেড পোয়েটস সোসাইটির অভিজ্ঞতাকে রবিন উইলিয়ামস তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন বলে বিবেচনা করতেন।
৫। ছবিটির বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার টম শুলম্যান যিনি অস্কার জিতেছিলেন সেরা চিত্রনাট্যের জন্য তিনি এর আগে দুইটি কমেডি লিখেছিলেন ‘আই শ্রাঙ্ক দ্য কিডস’ এবং ‘ হোয়াট এবাউট বব’ নামে। ডেড পোয়েট সোসাইটি তার প্রথম ফিচার চিত্রনাত্য ছিল।
৬। বিল মারে, ডাস্টিন হফম্যান, লিয়াম নেসন, মেল গিবসন, এলেস বাল্ডউইন, মিকি রোর্ক—হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতাদের ছাপিয়ে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হন রবিন উইলিয়ামস।
৭। ছবিটি শুটিং হয় ডিলাওয়ার জায়গার সেন্ট এন্ড্রিউ স্কুলে। সিমন মে যিনি ছবিতে উপাচার্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি আসলেই সেই স্কুলের উপাচার্য ছিলেন ।
৮। ছবির শেষ দৃশ্যে শিক্ষক কিটিং এর লিউকেমিয়ায় মৃত্যুর কথা থাকলেও পরে তা বাদ দেয়া হয় দর্শকদের মনোযোগ শুধু কিটিং এর ছাত্রদের মধ্যে রাখা জন্য।
৯। প্রথমে ছবির নির্মাতারা এই ছবিকে মিউজিক্যাল ছবি বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে অবশ্য তা বদলানো হয়। নাহলে আমরা এই সুন্দর ছবিটি পেতাম না।
১০। পেশাদার মূল অভিনেতারা ছাড়া চলচ্চিত্রে শিক্ষার্থীর ভূমিকায় অভিনয় করা প্রত্যেকেই ছিলেন সত্যিকারের স্কুলপড়ুয়া!
অনলাইন ডেস্ক/বিজয় টিভি