তাঁর ইনস্টাগ্রামে একটা কালো স্ক্রিন পোস্ট করলেন ডনাল্ড ট্রাম্পের ছোট মেয়ে টিফ্যানি আরিয়ানা ট্রাম্প। বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ করার সময়, বিক্ষোভের সমর্থন করার সময় এভাবেই কালো স্ক্রিন পোস্ট করা হয়। কালো স্ক্রিনের সঙ্গে টিফ্যানি হ্যাশট্যাগও জুড়ে দিয়েছেন, জাস্টিস ফর জর্জ ফ্লয়েড। মানে, জর্জ ফ্লয়েডের ন্যায়বিচার চাই। আর তার সঙ্গে তিনি জুড়ে দিয়েছেন হেলেন কিলারের লেখা কয়েকটা লাইন, সহজ বংলায় বললে, ”একা আমরা খুব বেশিকিছু করতে পারব না, কিন্তু একসঙ্গে আমরা অনেক কিছু করতে পারি।” এভাবেই ফ্লয়েডকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্পের ছোট মেয়ে। তাঁর মা এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপেলও একইভাবে নিজের ইনস্টাগ্রামে কালো স্ক্রিন পোস্ট করেছেন।
অন্যদিকে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার আগে বেআইনিভাবে আটক করার দায়ে আরও তিনজন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো প্রশাসন। আর তাঁকে হত্যার দায়ে মূল অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে আরও কড়া আইনের ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। ফ্লয়েডের হত্যার পিছনে এই চার পুলিশ কর্মীই ছিলেন। সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হলো। মিনেসোটায় বিক্ষোভকারীদের এই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।
প্রশাসন তাঁদের একটা দাবি মেনে নেওয়ায় বিক্ষোভকারীরা খুশি। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, এটা হলো প্রথম ধাপ। তাঁদের আরও একগুচ্ছ দাবি রয়েছে। সেগুলিও মানতে হবে। না হলে বিক্ষোভ চলবে। বস্তুত, অ্যামেরিকা জুড়ে বিক্ষোভ চলছেও। অনেক শহরে কার্ফু আছে। অনেক শহরে কার্ফু উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভ থামেনি। হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন। তবে এখন বিক্ষোভ পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।
জর্জ ফ্লয়েডের অটপ্সি রিপোর্ট এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরই মধ্যে সান ফ্রান্সিসকোতে পুলিশি বাড়াবাড়ির আরেকটি ঘটনা সামনে এসেছে। সেখানে পুলিশের সন্দেহ হয় মন্টেরোসা নামে একজন ব্যক্তি একটি ওষুধের দোকান লুট করেছে। তাঁর পকেটে একটা হাতুড়ি ছিলো। পুলিশ মনে করে, পকেটে রিভলভার রয়েছে। তারা সোজা ওই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
পুলিশের বক্তব্য, তারা ওষুধের দোকান লুটের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন। সে সময় দেখেন মন্টেরাসো দ্রুত একটি গাড়ির দিকে যেতে যেতে রাস্তায় হাঁটু মুড়ে বসে কোমরের কাছে হাত দেয়। সেখানে হাতুড়ি ছিলো। পুলিশ গাড়ি থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তাতেই ২২ বছরের ওই যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশের এই আচরণ বিক্ষোভের আগুন আরও উসকে দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে ভাবে এই বিক্ষোভ মোকাবিলার কথা বলছেন, তা নিয়ে সমালোচনা আরও তীব্র হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি সেনা নামিয়ে বিক্ষোভ মোকাবিলা করার কথা বলেছিলেন। তার বিরোধিতা করেছেন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার। তিনি বলেছেন, ”আমি কোনওভাবেই এই প্রস্তাব সমর্থন করি না। এটা চরম ও অন্তিম পদক্ষেপ। এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।”
প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিস বলেছেন, ট্রাম্প যে ভাবে সেনা নামানোর কথা বলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে, তিনি সামরিক বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘাত তৈরি করতে চান। ম্যাটিস বলেছেন, ”আমি বিক্ষোভ দেখছি, নিজেও ক্রদ্ধ ও হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি।” ২০১৮-তে ট্রাম্পের সিরিয়া নীতির প্রতিবাদে ম্যাটিস পদ ছাড়েন।
ম্যাটিসের বক্তব্য, ”ট্রাম্প আমার জীবদ্দশায় দেখা একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছেন না, এমনকী চেষ্টার ভানও করছেন না। উল্টে তিনি আমাদের বিভক্ত করতে চাইছেন। গত তিন বছর ধরেই তিনি এই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।” ম্যাটিসের মতে, ”এখন ট্রাম্পকে ছেড়ে দিয়ে বাকি সকলকে একজোট হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা জরুরি।”
সূত্র: ডয়েচে ভেলে