করোনা সংকটের শুরুতে ইউরোপের দেশগুলি দিশাহারা হয়ে নিজস্ব সীমানা বন্ধ করে নিজস্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করেছিল৷ সংকট সামলাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় কোনো ভূমিকা ছিল না বললেই চলে৷ তারপর ইইউ এই সংকটের ফলে জর্জরিত অর্থনীতি সামাল দেবার উদ্যোগ শুরু করে৷ শেষ পর্যন্ত জার্মানি ও ফ্রান্সের শীর্ষ নেতারা বিভেদ ভুলে ইইউ-র ছত্রছায়ায় বিশাল অঙ্কের এক অর্থনৈতিক প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে সেই উদ্যোগকে ঘিরে এখনো সম্পূর্ণ ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি৷ শুক্রবার ইইউ শীর্ষ নেতাদের ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে মতপার্থক্য দূর করে এ ক্ষেত্রে ঐকমত্যের চেষ্টা চালানো হবে৷ তবে এ দিনই চূড়ান্ত ফলাফলের আশা করা হচ্ছে না৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, করোনা সংকটের জের ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে মারাত্মক মন্দার মুখে পড়েছে৷ এই সংকট থেকে বের হতে জরুরি ভিত্তিতে ইইউ বাজেট ও পুনর্গঠন তহবিল সম্পর্কে ঐকমত্যের প্রয়োজন৷ বৃহস্পতিবার জার্মান সংসদে দেওয়া এক ভাষণে ম্যার্কেল আরও বলেন, ইউরোপীয় প্রকল্প কতটা ভঙ্গুর, এই মহামারি তা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ তিনি আত্মসমালোচনার সুরে বলেন, ইউরোপীয় উদ্যোগের ফলে জাতীয় স্তরে প্রাথমিক পদক্ষেপ সেই দুর্বলতা তুলে ধরেছে৷
করোনা সংকটের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে ইইউ বাজার থেকে ৭৫,০০০ কোটি ইউরো ঋণ নেবার প্রস্তাব রেখেছে৷ বিশেষ করে ইটালি ও স্পেনের মতো দেশের বাইরের সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷ ইউরোপীয় কমিশন এর দুই-তৃতীয়াংশ অনুদান ও এক তৃতীয়াংশ ঋণ হিসেবে বণ্টন করার প্রস্তাব রেখেছে৷ সেইসঙ্গে ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী ইইউ বাজেটের অঙ্ক বাড়িয়ে এক লাখ দশ হাজার কোটি ইউরো করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসের ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি৷ এর মধ্যে জার্মানি সুর নরম করলেও অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডসের মতো কিছু দেশ ঋণের বোঝা ভাগ করে নেওয়ার ঘোর বিরোধী৷ তবে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেছেন, শেষ পর্যন্ত আপোশের প্রয়োজন হবে৷ সরাসরি আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে দুর্বল দেশগুলিকে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অঙ্গীকার করতে হবে বলে তিনি মনে করেন৷
মতপার্থক্য সত্ত্বেও ইইউ শীর্ষ নেতাদের উপর দ্রুত ঐকমত্য অর্জনের জন্য চাপ বাড়ছে৷ মহামারির সরাসরি প্রভাবের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বর্তমান ভূমিকার কারণেও ইউরোপের সমৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়েছে৷ এই অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্পষ্ট পদক্ষেপ না নিলে ইউরোপের মানুষের মনে ক্ষোভ বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে৷ জুলাই মাসের মধ্যে সেটা সম্ভব না হলে শরৎকালের মধ্যে ইইউ দেশগুলির অর্থনৈতিক সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷ সূত্র: ডয়েচে ভেলে