মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ওই তালিকায় রয়েছে ভিডিও নজরদারির প্রতিষ্ঠান হিকভিশন, চায়না টেলিকম, চায়না মোবাইল এবং এভিআইসি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবার মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে দেশটির নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথ সুগম হলো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বিবিসি সংবাদদাতারা বলছেন, চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে স্পর্শকাতর প্রযুক্তি দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে পাচার করছে, মার্কিন কংগ্রেশনাল কমিটি, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও চীনা ব্যবসায়ে মার্কিন অংশীদারদের জানানোর জন্যই এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই তালিকা আরো বড় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন আইন অনুযায়ী, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির “মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত” প্রতিষ্ঠান যারা যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত আছে তাদের খুঁজে বের করার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই তালিকা প্রকাশের জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের আইন প্রণেতাদের পক্ষ থেকে পেন্টাগনের ওপর চাপ বাড়ছিল।
নভেম্বরে মার্কিন সেনেটর টম কটন এবং চাক শুমার দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসকে একটি চিঠি লিখে দেশটির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দুইটি নীতি পর্যালোচনার আহ্বান জানান।
ওই চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে চীনা সংযোগ রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন প্রযুক্তি রপ্তানির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেন দ্রুত রপ্তানি–নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আইন সংস্কার করছে না সে প্রশ্নও তোলা হয়।
তাদের দাবি ছিল, সামরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মার্কিন প্রযুক্তি গোপনে চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির কাছে চলে যাচ্ছে কি না, এবং চীনা কর্পোরেশনগুলো সাধারণ নাগরিকেরা ব্যবহার করেন এমন সাধারণ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশটির সামরিক বাহিনীর জন্য তথ্য সরবারহ করছে কিনা, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হোক।
জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত এই অনুসন্ধান এবং নীতি পর্যালোচনার কাজটি বরার দাবি জানান মি. কটন এবং মি. শুমার।
২০১৮ সাল থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে চীন সরকারের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু চীন এবং হুয়াওয়ে বরাবর এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
কিছু পশ্চিমা দেশ হুয়াওয়ের সরঞ্জামাদি তাদের দেশের টেলিকম নেটওয়ার্কে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, এর কারণ হিসেবে তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা বলছে।
হোয়াইট হাউজ ইতিমধ্যেই হুয়াওয়ে এবং অন্য চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হুয়াওয়ের কাছে নির্দিষ্ট কিছু প্রযুক্তি সরকারি অনুমতি ছাড়া কোন মার্কিন কোম্পানি বিক্রি করতে পারবে না।
প্রশাসন ইতিমধ্যে এও বলেছে যে, হুয়াওয়ে আমেরিকার বাণিজ্যিক গোপনীয়তা চুরি করেছে, আর নতুন চীন–আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধ তারই একটি জবাব।
হুয়াওয়ে এই মূহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানিগুলোর একটি।
মূলত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের যন্ত্রপাতি তৈরি করে এটি।
এক্ষেত্রে তাদের আগে মূলত নকিয়া এবং এরিকসনের মতো কোম্পানিরই একচেটিয়া ব্যবসা ছিল।
কিন্তু এরই মধ্যে হুয়াওয়ে তাদের ছাড়িয়ে গেছে।
এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন রেন ঝেংফেই, যিনি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন সাবেক কর্মকর্তা।
হুয়াওয়ের সদর দফতর চীনের শেনজেনে।
এক লাখ আশি হাজার মানুষ এই কোম্পানিতে কাজ করেন।
এটির মালিকানা ৮০ হাজার কোম্পানি কর্মীর হাতে। সূত্র: বিবিসি বাংলা