ভারতের আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ লেনদেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের পর বিভিন্ন দেশ গ্রুপটির সঙ্গে করা চুক্তি খতিয়ে দেখছে। আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশও বিপাকে আছে। দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন শর্তের কারণে চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রুপটির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুরো বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
রোববার (১ ডিসেম্বর) লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, চুক্তিতে অসঙ্গতি থাকলে আদানির সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করবে বাংলাদেশ। তবে, দুর্নীতি এবং ঘুষের মতো অনিয়ম হয়ে থাকলে চুক্তি বাতিল হবে। আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত চলছে তার ভিত্তিতেই এটি হবে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতে করছাড় পেলেও বাংলাদেশে এর উপকার পাচ্ছে না। বিষয়টি ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপকে জানানো হয়েছে। চুক্তি পুনর্বিবেচনার একাধিক কারণের মধ্যে এটিও একটি হতে পারে।
আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন ফাওজুল কবির।
বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে প্রতি বছর ৩২০ বিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দিতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা চাই বিদ্যুতের দাম শুধু আদানি থেকেই নয়, গড় খুচরা দামের নিচে নামুক।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা রয়েছে। তবে, গ্যাস সংকটসহ অন্যান্য কারণে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে উৎপাদনে নেই। আদানি যখন সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশের কিছুই হয়নি। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে দেব না।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে আওয়ামী লীগ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির পরতে পরতে রয়েছে অসমতা। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত আছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি। মূলত, গত আগস্টে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে।