দুর্দান্ত কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়ে কোপা আমেরিকার গ্রুপপর্ব পার করলো ব্রাজিল। আর এর ফলে গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখতে হচ্ছে সেলেসাওদের। এতেই নিশ্চিত হয়ে গেছে কোপার পরবর্তী ধাপে শক্তিশালী উরুগুয়ের সামনে পড়তে হচ্ছে দোরিভাল শিষ্যদের, যেখানে কার্ডের খাঁড়ায় পড়ে থাকছে না তাদের আক্রমণভাগের সবচেয়ে বড় ভরসা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের পথে বেশ সহজ এক সমীকরণ নিয়েই আজ কলম্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ব্রাজিল। শুধু ড্র-ই যথেষ্ট ছিল তাদের। তবে, আড়ালে ছিল আরেকটা হিসাব। জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে দুর্বল পানামাকে পাওয়া যেত কোয়ার্টার ফাইনালে। আর ড্র করলে সামনে দারুণ ফর্মে থাকা শক্তিশালী উরুগুয়ে। তাই বলাই যায়, ড্র নয়; বরং জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিল রাফিনহা-রদ্রিগো-ভিনিরা। মাঠে বল গড়ানোর মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় গোলও পেয়ে যায় তারা। দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে কলম্বিয়ান গোলরক্ষক ভারগাসকে পরাস্ত করে সেলেসাওদের এগিয়ে দেন রাফিনহা।
কিন্তু কোয়ার্টারে সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়ার লড়াইয়ে কোনোরকম ছাড়া দিতে রাজি ছিল না আগেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলা কলম্বিয়া। ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে পড়েও তারকায় ঠাসা ব্রাজিলের সঙ্গে তারা লড়াই করতে থাকে চোখে চোখ রেখে। বল নিয়ে মাঠে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি ব্রাজিলিয়ান মাঝমাঠ। বরং একটা পর্যায়ে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন হামেস রদ্রিগেজ-লুইস ডিয়াজরা। ফলে গোলবারের নিচে দারুণ ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে এলিসন বেকারকে। পুরো প্রথমার্ধে ব্রাজিল যেখানে প্রতিপক্ষের গোলমুখে শট নিয়েছে মাত্র তিনটি, সেখানে কলম্বিয়া নিয়েছে ৮টি শট। প্রথমার্ধের শেষ দিকে কষ্টের ফলও তুলে নিতে সক্ষম হয় তারা। যোগ করা সময়ে হুয়ান কর্দোবার কাছ থেকে বক্সের মধ্যে বল পয়ে ডান পায়ে জোরালো এক শট নেন কলম্বিয়ান রাইটব্যাক ড্যানিয়েল ম্যুনোজ। এতে ম্যাচের শুরুতে খাওয়া গোলটা শোধ করেই প্রথমার্ধ শেষ করতে সক্ষম হন রদ্রিগেজ-ডিয়াজরা।
অবশ্য এগিয়েও বিরতিতে যেতে পারতো কলম্বিয়া। রাফিনহার গোলের মাত্র মিনিট সাতেকের মাথায় হামেস রদ্রিগেজের দারুণ এক ফ্রি-কিকে এলিসনকে পরাস্ত করেন ডেভিসন সানচেজ। কিন্তু তার ওই গোলটি বাতিল হয়ে যায় জেফারসন লারমা অফসাইডে থাকায়। এরও আগে রদ্রিগেজের আরেকটি দারুণ ফ্রি-কিক ব্যর্থ হয়ে যায় ক্রসবারে লেগে।
এদিকে ম্যাচের শুরুতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে খেললেও ওই ম্যাচে খেলতে পারবেন না ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। জিততে না পারলে সামনে উরুগুয়ে। সে চিন্তা থেকেই হয়তো দ্বিতীয়ার্ধে গোল আদায়ের মরিয়া চেষ্টা শুরু করে ব্রাজিল। সামান্য উন্নতি হয় বল দখলের লড়াইয়ে। ধার বাড়ে আক্রমণে। ৫১ মিনিটে কলম্বিয়ান ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো এক শট নেন ভিনি। কিন্তু শটটা চলে যায় গোলবারের ডান পাশে ওপর দিয়ে। দুই মিনিট পর এডার মিলিতাওয়ের একতা চেষ্টা আটকে দেয় কলম্বিয়ার রক্ষণ।
এরপর ৫৯ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পেয়ে যায় ব্রাজিল। প্রথমার্ধে এমনই এক জায়গা থেকে ফ্রি-কিক নিয়ে দলকে এগিয়ে দেন রাফিনহা। এবারও শট নিতে আসেন বার্সেলোনার এই উইঙ্গার; শটটাও নেন দারুণ। কিন্তু তার বাম পায়ে নেওয়া বাঁকানো শটটা বেরিয়ে যায় পোস্টের বাঁ পাশ ঘেঁষে।
অবশ্য এই অর্ধে তেমন একটা পিছিয়ে ছিলনা কলম্বিয়াও। বল দখলটা ঠিক রেখে দারুণ কয়েকটা আক্রমণ শানিয়েছে তারাও। ৬৯ মিনিটে হামেস রদ্রিগেজের ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে হেড নিয়েছিলেন জন করডোবা। কিন্তু দারুণ দক্ষতায় সেই বলটা লুফে নেন এলিসন বেকার।
৮৩ মিনিটে গোলের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা ধরা দেয় কলম্বিয়ার কাছে। লুইস দিয়াজের ক্রস থেকে ফাঁকা পোস্টে গোলের সুযোগ পেয়ে যান রাফায়েল বোরে। কিন্তু বলটা তিনি পাঠিয়ে দেন গোলবারের ওপর দিয়ে।
কলম্বিয়ার দাপটের দিনে ম্যাচটা জেতার আরেকটা শেষ সুযোগ পায় ব্রাজিল অন্তিম মুহূর্তে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরিয়ে ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন আন্দ্রেস পেরেইরা। কিন্তু লাফিয়ে উঠে কোনোমতে কলম্বিয়াকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক ভারগাস। ১-১ সমতায় শেষ হয় ম্যাচ। নিশ্চিত হয় কলম্বিয়ার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে আগামী ৭ জুলাই বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় দুর্বল পানামার বিপক্ষে মাঠে নামবে তারা। একইদিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে দারুণ ছন্দে থাকা উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। কোচ দোরিভালের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ এ লড়াইয়ে দলের আক্রমণভাগের মূল ভরসা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে পাবেন না তিনি। অবশ্য ছোট্ট একটা দুঃসংবাদ আছে কলম্বিয়ার জন্যও। ব্রাজিলের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে কার্ড দেখে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে গেছেন তাদের জেফারসন লারমা।