কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতারে ভুল ইনজেকশন পুশ করায় দুই রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ৮টায় পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে। ভুল চিকিৎসার বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত ওই নার্সকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকার।
হার্নিয়ার চিকিৎস জন্য গত ৭ জানুয়ারি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কটিয়াদী উপজেলার ধুলদিয়া এলাকার ফালু মিয়ার ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২)। অপরদিকে খাদ্য নালিতে ছিদ্র থাকায় ব্যথা জনিত কারণে গত ১২ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিলেন জেলার নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জহিরুল (২২)।বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে দুজনেরই অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। অপারেশনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে সিনিয়র স্টাফ নার্স নাদিরা আক্তার ওয়ার্ডের সীটে রেখেই দুজনকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই দুজন কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে ডাক্তার এসে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।
অভিযোগ রয়েছে, “নর কিউ” নামক অ্যানেসথেশিয়ার ইনজেকশনটি অপারেশন থিয়েটারে পুশ করার কথা ছিল, সেটি আগেই ভুল করে ওয়ার্ডের সীটেই পুশ করেন নার্স। এতেই ঘটে বিপত্তি। মৃত্যু হয় দুজন তরতাজা যুবকের।
তাদের মৃত্যুর খবরে আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে হাসপাতালের সামনের রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভও করেন। উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের প্রধান ফটকের গেইট ভেঙ্গে ফেলেন। তারা সংশ্লিষ্ট নার্সের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার পর পরই সেনবাহিনী, পুলিশ ও ডিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
নিহত মনিরুজ্জামান মল্লিকের স্ত্রী মনিরা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আজকে অপারেশন করার কথা। আমি সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমার স্বামীর খোঁজ নিয়েছি। তখনও তাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। ডাক্তার বলেছিল সকাল সাড়ে ৮টায় অপারেশ করবে। সেই অনুযায়ি বাড়ি থেকে এসে দেখি আমার স্বামী মারা গেছে। যেই ইনজেকশন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে দেওয়ার কথা সেখানের পরিবর্তে বেডের মধ্যে ভুল ইনজেকশন দিয়েছে। তারপর আমার স্বামী যখন ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল তখন ওই নার্সকে বার বার বলা হলেও তিনি এসে দেখননি। কোন ডাক্তারও আসেনি। তারা ভুল ইনজেকশন দিয়ে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। হাসপাতাল থেকেই সকল ইনজেকশন ও ঔষধ দিয়েছে। আমার স্বামীর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
নিহত জহুরুল ইসলামের বড় ভাই মাসুক মিয়া বলেন, আমার ভাইয়ের পেটে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে অপারেশন করার কথা ছিল। এর আগেই ভুল ইনজেকশন দিয়েছে নার্স নাদিরা। ইনজেকশন দেওয়ার আধা ঘন্টার ভেতরে আমার ভাই মারা যায়। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার ভুল ইনজেকশনে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নার্সকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ অজয় সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে কি ঘটেছিলো। তাছাড়া ওই নার্সের যেন সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ রাখা হয় সেই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছি চিঠির মাধ্যমে জানানো হবে। একই সাথে চাকুরী বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে তিনি নিজেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।