জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের যাচাই-বাছাই করে একটি ইউনিক কার্ড দেওয়া হবে। যা দিয়ে দেশের যে কোনো সরকারি ও চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে আজীবন চিকিৎসাসেবা পাবেন। একই সঙ্গে আন্দোলনে আহতদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুর ২টায় রাজধানীর বিএসএল ভবনের সামনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসনের রোডম্যাপ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, এর আগে শহীদ ও আহতদের একটি তালিকা করা হয়েছে। এই তথ্যগুলো এমনভাবে যাচাই করা হচ্ছে, যাতে ২০ বছর পরও এই তালিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। নভেম্বরের মধ্যে শহীদ পরিবারের তথ্যগুলো যাচাই শেষ করা এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে।
আহতদের জন্য ‘ইউনিক আইডি কার্ড’ করা হবে বলেও জানিয়েছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ক্যাটাগরি (ধরন) অনুযায়ী কার্ডগুলো ভিন্ন থাকবে। প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য সুযোগ-সুবিধাও ভিন্ন থাকবে। অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্যই এটি করা হবে।
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও মীর মুগ্ধ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহতদের সরাসরি মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে একটি কেন্দ্রীয় পরিচালনা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশে সব আহতদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে প্রাথমিক মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামনাসামনি সাইকোথেরাপির জন্যে ৮টি বিভাগীয় সদরের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় দক্ষ পেশাজীবীদের মাধ্যমে সেবাদান শুরু করা হবে।
টেলিমেডিসিন সেবা
বর্তমানে একটি ফোন নম্বরে আহতদের জন্য সহায়তা সেবা চালু আছে, তার সঙ্গে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে টেলিমেডিসিন সেবাও যুক্ত করা হবে। এই নম্বর থেকে তালিকাভুক্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে এবং তাদের মতামত বা অভিযোগ গ্রহণ করা হবে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহতদের বিদেশে প্রেরণ
ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে যাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন, তাদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় অবগত করা হয়।
ওই সুপারিশ পর্যালোচনার উদ্দেশে জুলাই ফাউন্ডেশন গঠিত রিভিউ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তারপর সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা চলমান আছে এবং ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।
আইনি সেবা
নিহতদের পক্ষ থেকে যেভাবে সরকার আইনি লড়াই শুরু করেছে, একইভাবে আহতদের পক্ষ থেকেও সরকার বাদী হয়ে মামলা করা হবে।
এ ছাড়া হতাহতদের চিকিৎসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অবহেলা ও গাফিলতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ সব সেবাদানকারীকে চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে সব চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।