অর্থ সংকট, দেনার দায় আর পাহাড় সমান লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নুয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া চিনিকল। ৭ মাস ধরে বেতন পান না এখানকার শ্রমিক-কর্মচারীরা। আখ চাষিরাও পায় না তাদের দীর্ঘদিনের পাওনা টাকা। মিলে উৎপাদিত ২১ কোটি টাকার চিনি আর ৫ কোটি টাকার চিটাগুড় অবিক্রিত থাকার কারণে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটির এখন বিপর্যস্ত অবস্থা। বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে মিলটি। এতে হতাশ শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষিরা।
কুষ্টিয়া চিনিকল লিমিটেড। কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে জগতি নামক স্থানে ১৯৬১ সালে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে চলে ১৯৬৫ সালে পর্যন্ত। স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এ প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। এই বৃহদায়তন ভারী শিল্প-কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সার কারখানা, অফিস ও আবাসন ভাবনের সমন্বয়ে গঠিত। এখানে চিনি মজুদ করে রাখার জন্য প্রতিটি ৬৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার দুটি গুদাম ঘর রয়েছে।
মিলটির দৈনিক আখ মাড়াই করার ক্ষমতা ১,৫২৪ মেট্রিক টন এবং উৎপাদনের ক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী নিয়ে বিশাল এক কর্মযজ্ঞে মুখর থাকতো মিল এলাকা। সর্বশেষ ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমেও এই মিল থেকে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা লাভ হয়। এরপর, ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছরই লোকসানের পরিমাণ বাড়তে থাকে। গত ১৯ বছরে ৪শ’ ৬১ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে মিলটি। আর গেল মৌসুমে ৬১ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
মিলটিতে বর্তমানে ৬শ’ শ্রমিক কর্মচারী রয়েছে। গত ৭ মাস ধরে বেতন পান না তারা। এতে করোনার এ সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
এদিকে, আখচাষিরাও দীর্ঘদিন ধরে আখ বিক্রির পাওনা অর্থ পান না। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে কুষ্টিয়া চিনিকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন খবর শুনে মিলগেটে ভিড় করছেন তারা।
অন্যদিকে, মিল বন্ধের কথা শুনে মিল চালু রাখার পাশাপাশি বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ৫ দফা দাবীতে আন্দোলনে নেমেছেন কুষ্টিয়া চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীরা। মিল কর্তৃপক্ষ বলছেন, পুরনো এ মিলটি আধুনিকায়ন করা হলে আবারো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। ২১ কোটি টাকার চিনি আর ৫ কোটি টাকার চিটাগুড় অবিক্রিত রয়েছে। এগুলো বিক্রি হলে কৃষকের দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
দীর্ঘদিনের এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলে এখানে কর্মরত সহস্রাধিক শ্রমিক বেকারত্ব জীবনযাপন করবে। এতে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। তাই মিলটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কুষ্টিয়াবাসী।
ডেস্ক নিউজ/বিজয় টিভি