দুর্ভাগ্যজনক হলো এই ধরনের শিরোনাম দেশটিতে নতুন কিছু নয়। ভারতে এই মাসের শুরুতেই একজন নারীকে বিবস্ত্র করে ঘোরানোর ঘটনায় তোলপাড় চলছে। তবে আইনজ্ঞ এবং জেন্ডার আক্টিভিস্টদের মতে এই জাতীয় অপরাধের মোকাবিলা করার জন্য ভারতে সেই অর্থে বলিষ্ঠ আইন নেই। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বলছে, বিবস্ত্র করার ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে নারীর শালীনতা নষ্ট করতে আক্রমণ করা হিসেবে। রাস্তায় হেনস্থা, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি, অনুসরণ এবং ‘ভয়্যারিজম’-এর ঘটনাকেও ব্যাখা করা হয়েছে ওই তালিকায়।
গত বছর দেশে এসব ঘটনায় ৮৩,৩৪৪টি মামলা নথিভুক্ত হয়। যাতে ৮৫,৩০০ জন নারী আক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও এ পরিসংখ্যানে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। কারণ, অনেক ঘটনা পত্রিকার শিরোনাম না হওয়ার কারণে আড়ালেই থেকে যায়।
আইনজীবী এবং অধিকার কর্মী সুকৃতি চৌহানের মতে, এই ধরনের মামলাগুলো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ অনুচ্ছেদের অধীনে নিষ্পত্তি করা হয় এবং মাত্র তিন থেকে সাত বছরের জেল হয়। যা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, এটা ন্যায়বিচারের উপহাস ছাড়া কিছু নয়। শাস্তি বাড়ানোর জন্য এর সংশোধন প্রয়োজন।
শশীকলার (ছদ্মনাম) বাড়িতে গত ১১ ডিসেম্বর যখন একদল লোক হঠাৎ ঢুকে পড়ে, তখন ঘড়িতে বাজে রাত ১টা। ৪২ বছর বয়সী ওই নারীকে ঘর থেকে টেনে বের করে নগ্ন অবস্থায় গ্রামের চারপাশে ঘোরানো হয়। তারপর বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেধড়ক পেটানো হয়। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের বাসিন্দা ওই নারীকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার কারণ তার ছেলে বান্ধবীর সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল।
বেলাগাভি জেলার হোসা ভান্টামুরি গ্রামের ওই প্রেমিক যুগলের বয়স যথাক্রমে ২৪ বছর এবং ১৮ বছর। যুবতীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়েছিল, বাগদানও হয়েছিল। যেদিন বিয়ে হওয়ার কথা তার আগের রাতে পালিয়ে যায় তারা। মেয়েটির ক্ষুব্ধ পরিবার জানতে চেয়েছিল দম্পতি কোথায় রয়েছে। খবর পেয়ে ভোর ৪টা নাগাদ পুলিশ গ্রামে পৌঁছে শশীকলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি তখন মানসিক ভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত। পরে ওই রাজ্যের এক মন্ত্রী দেখা করতে এলে শশিকলার স্বামী তাকে বলেছিলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী কিন্তু ওদের দু’জনের সম্পর্কের কথা জানতাম না।’
এক ডজনেরও বেশি লোককে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়ছিল এবং একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলার কারণে স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল