সংক্ষিপ্ত ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়েছে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে (প্রতিনিধি পরিষদ)। বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ৩৫২-৬৫ ভোটে পাস বিলটি পাস হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে পাসের পর এখন বিলটি যাবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। সেখানে পর্যালোচনা, যাচাই এবং পাস হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে পাঠানো হবে সেটি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষরের পর পুরোপুরি আইনে পরিণত হবে সেই বিল।
সিনেটে ভোটের ফলাফলও যেন প্রতিনিধি পরিষদের অনুরূপ হয় সেজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বুধবারই আহ্বান জানিয়েছেন নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকান পার্টির ২য় গুরুত্বপূর্ণ নেতা (নাম্বার ২ হাউস রিপাবলিকান) স্টিভ স্ক্যালিস। এক্সপোস্টে তিনি বলেন, ‘এই বিলটি খুবই স্পর্শকাতর এবং এর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারটি সম্পর্কিত। আমরা আশা করছি, সিনেট এর গুরুত্ব বুঝতে পারবে এবং এটি পাস করবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ৩৩ কোটি ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে টিকটক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। অর্থাৎ, দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই টিকটক ব্যবহার করেন। এই ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ প্রজন্মের।
মার্কিন পার্লামেন্টে চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের তৈরি এই সংক্ষিপ্ত ভিডিও কন্টেন্ট শেয়ারিং অ্যাপটিকে যে দেশজুড়ে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল গত সপ্তাহে। ৭ মার্চ মার্কিন ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে এক বার্তায় বাইটড্যান্স কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার জন্য একটি বিল হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে প্রস্তুত করা হচ্ছে। মার্কিন টিকটক ব্যবহারকারীদের প্রতি অনুরোধ, আপনাদের এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের বলুন যে টিকটক আপনাদের সম্পত্তি এবং (পার্লামেন্টে বিলটি উত্থাপন করা হলে) তারা যেন ‘না’ ভোট দেন।’
কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন, টিকটক এই বার্তা দেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন তাদের কাছে অজস্র ফোনকল আসছে।
তবে মার্কিন প্রশাসন তাদের অবস্থানে অনড়। বুধবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জেন-পিয়েরে হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা চাই সিনেট দ্রুত এ ইস্যুতে পদক্ষেপ নিক।’
এদিকে প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাসের কিছুক্ষণ পর এক ভিডিওবার্তায় বাইটড্যান্সের শীর্ষ নির্বাহী শৌ জি চিউ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে— তা দেশটির অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। এতে একদিকে ক্ষুদ্র-খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেট থেকে শত শত কোটি ডলার হারিয়ে যাবে অন্যদিকে অন্তত ৩ লাখ মার্কিনির কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।’
ভিডিওবার্তায় শৌ জি চিউ আরও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে শিগগিরই আইনি লড়াই শুরু করবে বাইটড্যান্স।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে— এমন কোনো প্রমাণ দেশটির সরকার পায়নি, তারপরও এই অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার জন্য ওয়াশিংটন উঠে পড়ে লেগেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়া এই বিলটি পাসের পক্ষে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, যদি টিকটক নিষিদ্ধ সংক্রান্ত কোনো বিল তার কাছে আসে, তাহলে সেখানে তিনি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। পরে মঙ্গলবার বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা কী এমন কোনো প্ল্যাটফরম এই দেশে চাই, যেটি মার্কিন শিশু-প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যক্তিগত তথ্য চীনে পাচার করবে? নিশ্চিতভাবেই চাই না।’
২০২১ সালে টিকটকের বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগ ওঠে। ওই বছরই মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এই অ্যাপটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন। পরের বছর ২০২২ সালে দেশটির সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও একই আদেশ দেওয়া হয়।
সেই পথ ধরেই এবার সাধারণ পর্যায়ে টিকটক ব্যবহার নিষিদ্ধের পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, নাগরিকদের কাছে টিকটকের অতিমাত্রায় জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সেই দুশ্চিন্তারই ফসল হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে পাস হওয়া বিলটি।
সূত্র : রয়টার্স