নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘরছাড়া তালিকাভুক্ত ৫৫ তরুণের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকি ২১ জন পলাতক রয়েছেন।
তাদের জঙ্গি সংগঠনটির প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার আমির আনিছুর রহমান ওরফে মাহমুদ এবং দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ বিষয়ক উগ্রবাদী বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার হওয়ার পর এ তথ্য জানায় র্যাব।
২৮ ফেব্রুয়ারি পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এদের মধ্যে গ্রেফতার আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছ থেকে নতুন ওই ভিডিওটি উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২৩ জানুয়ারি গ্রেফতার নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরের কাছ থেকে একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ওই ভিডিওতে মোট ২৯ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার হওয়া ৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের নতুন ভিডিওতে আরও ২৩ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। ওই ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি আগের ভিডিওতেও ছিলেন আর ৪ জন নতুন জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
নতুন চারজন হলেন- শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান, নিজাম উদ্দিন হিরণ ও ডা. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ।
ভিডিওর তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ৬ জুন ডা. জহিরুল মারা গেছেন। দুই নম্বর ভিডিওতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে থাকা মোট ৩৩ জনকে শনাক্ত করা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
নতুন পাওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত অর্থ সংগ্রহ এবং সদস্য সংগ্রহের জন্য এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। অপরদিকে দেশে বড় কোনো নাশকতার পর নিজেদের অস্তিত্ব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে জানান দেওয়াও এই ভিডিওর উদ্দেশ্য হতে পারে।
সংগঠনটির আমির রাকিব বাবা দাওয়াতি শাখার প্রধান মাইমুনকে গ্রেফতার করতে পারলে ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
জানা গেছে, দুইটি ভিডিওতেই ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই যিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ রিয়াসাত রায়হান ওরফে আবু বক্করের প্রাইভেট টিউটর। তার মাধ্যমেই আবু বক্কর ঘর ছাড়েন যান। আর ভিডিওটি এডিটিং করেছেন পাভেল নামে অপর এক জঙ্গি।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গত নভেম্বর থেকে তাদের মোবাইলে ভিডিওটি ছিল। ভিডিওর কাজটি চলমান ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই র্যাবের অভিযান শুরু হয়।
এখন পর্যন্ত কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারা নিজেদের গ্রুপের মধ্যেই এগুলো সরবরাহ করেছে। কোনো নাশকতার পরে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে এটি ব্যবহৃত হতে পারবো। যদিও এ বিষয়ে সংগঠনটির আমিরই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন গ্রেফতাররা। তবে এখন নতুনদের উদ্বুদ্ধ করে সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহের জন্য ভিডিওটি ব্যবহৃত হচ্ছিল।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন নিজেদের স্বার্থেই নতুন জঙ্গি সংগঠনকে আশ্রয়, রশদ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর বড় স্বার্থ অর্থ। এছাড়া ৬০-৭০ জনের টিম তাদের সঙ্গে যোগ করেছে, এতে তাদের শক্তিও বেড়েছে। এর বাইরে অন্য কোন স্বার্থের বিষয় রয়েছে কিনা কুকি চিনের নেতৃত্ব পর্যায়ের কাউকে গ্রেফতার করতে পারলে জানা যাবে।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রধান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণে প্রধান সমন্বয়কারী শামিন মাহফুজ।
সংগঠনটি ২০১৭ সালে কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১৯-২০ এ নামকরণ করা হয়। প্রথমে সংগঠনের প্রধান বা আমির ছিলেন রক্সি। কিন্তু সর্বশেষ ২০২১ সালে রক্সি গ্রেফতারের পর ২০২২ সালে সবাই বৈঠক করে মাহমুদকে আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যখন রক্সিকে গ্রেফতার করা হয় তখন নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট তথ্য ছিল না। তাকে সেসময় অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার করা হয়।
নতুন সংগঠনের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয় তাদের সমতলে আত্মগোপনের নির্দেশনা ছিল। এজন্য তারা চারদিন ধরে পাহাড় থেকে হেঁটে বান্দরবান শহরে আসেন। তাদের বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এখন তাদের কি শুধু আত্মগোপন নাকি অন্য কোনো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
র্যাবের অব্যাহত অভিযানে এখন পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৯ জন জঙ্গি ও তাদের প্রশিক্ষণের সহায়তার অভিযোগে ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠনের ২ জনকে ডির্যাডিকালাইজড করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।