বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন ও অনেক জায়গায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছে।
সোমবার (২৭ মে) দুপুরে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিচালন ও বিতরণ) দেবাশীষ চক্রবর্তী।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আশা করছি, রাতের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবারহ স্বাভাবিক হবে। পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ওজোপাডিকোর প্রায় দুই লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশালের অধিকাংশ গ্রাহক এবং ফেনী, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এলাকাভেদে ১০ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না এসব এলাকার গ্রাহকরা।
বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, তার ছিঁড়ে এবং সঞ্চালন লাইনে গাছপালা ভেঙে পড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। এর ফলে বাগেরাহাটের ছয় লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
গতকাল রোববার সকাল থেকেই জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় অধিকাংশ আশাশুনি উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় গতকাল সারা দিনই বিদ্যুৎ ছিল না। অন্যান্য এলাকাতেও বিদ্যুৎ ছিল আসা-যাওয়ার মাঝে। জেলা সদরে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছিল। কিন্তু সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় রাত ১১টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান বলেন, রাত থেকেই ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে রোববার রাত দেড়টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে ৫৫টি স্থানে লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে। এ কারণে গতকাল রোববার রাত দেড়টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ে নষ্ট হয়েছে পাঁচটি ট্রান্সফরমার এবং ৫৫টি বৈদ্যুতিক মিটার। ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার ৭০ হাজার গ্রাহক।
পিরোজপুর জেলা প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুর সদর উপজেলার নামাজপুর, ভাইজোড়া, শারিকতলা, পাড়েরহাটসহ জেলার কাউখালী, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও নেছারাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার লোক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পিডিবি জানিয়েছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা উপকূলীয় এলাকায় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।
পিডিবির মুখপাত্র শামীম হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় সারাদেশের অনেক বৈদ্যুতিক পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-মূলত খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর আবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হবে।