রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদেরকে ফিলিস্তিনসহ দেশের দারিদ্র পীড়িত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (১৭ জুন) বঙ্গভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করে এ কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি দেশের বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কেউ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে সমাজের দারিদ্র পীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ান।’
বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া এক শুভেচ্ছা ভাষণে রাষ্ট্রপতি দেশবাসীকে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিশ্বের অনেক স্থানে মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে, বিনা চিকিৎসায় ও স্বজনহারা বেদনায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে।
সম্প্রতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘অনেকেরই ইচ্ছা থাকলেও কোরবানি করতে পারছে না। ঘূর্ণিঝড়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং ঈদের খুশিতে তারাও যাতে শরিক হতে পারে, সে চেষ্টা চালাতে সবাইকে।’
মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনি দেশ-বিদেশে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন,
ঈদুল-আজহা মানুষের মধ্যে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবার মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। পশু কোরবানির সাথে সাথে যাতে আমরা অন্তরের কলুষতা, হিংসা, বিদ্বেষ পরিহার করতে পারি- মহান আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনা করছি।
মশা-মাছি ও বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কোরবানির পর বাড়ির আশে-পাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখারও তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি কোরবানির বর্জ্য সময় মতো সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন: রাত ৮টার মধ্যেই পরিষ্কার হবে ডিএনসিসির বর্জ্য: আতিকুল ইসলাম
এরআগে রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ঈদুল আজহা উপলক্ষে বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরা এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সদস্য, সিনিয়র রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিচারক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কবি, লেখক, শিক্ষক এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সকালে সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রপতি রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে সর্বস্তরের জনগণের সাথে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার প্রধান জামাতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি জাতীয় ঈদগাহে পৌঁছালে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁকে স্বাগত জানান। নামাজ শেষে রাষ্ট্রপ্রধান ঈদগাহে মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ জামাতে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজ পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন।
বাংলাদেশের শান্তি ও অগ্রগতি এবং জনগণ তথা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশ ও জনগণের জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের চিরশান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম রাতে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ফিলিস্তিনের জনগণের শান্তি ও কল্যাণের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঈদগাহে নারীদের ঈদের নামাজ আদায়ের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে নামাজের মাঠে ও আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়।