গাইবান্ধার সব নদ-নদীতেই কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ফলে বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা ফিরছে বাড়িতে। তবে নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে যেতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে পানি কমলেও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো রয়েছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গেল চারদিনের ব্যবধানে জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৭৬ সেন্টিমিটার কমে রোববার দুপুর ১২টায় ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে ঘাঘট নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার কমে জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে, করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গেল ৫ জুন পর্যন্ত জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সর্বোচ্চ ৮৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি সর্বোচ্চ ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যা কবলিত হয়।
চলমান বন্যায় জেলার চার উপজেলার ২৯ ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তলিয়ে যায় সাড়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমির পাট, আউশ ধান, শাকসবজি ও আমন বীজতলা।
সরেজমিনে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট থেকে পানি নেমে গেছে। পানি ওঠা বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর ও উঠান থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে পানি নেমে গেলেও অনেক আঙ্গিনায় কাঁদা দেখা গেছে। ফলে তারা এখন চলাফেরায় ভোগান্তিতে রয়েছেন। তবে একেবারেই নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘরগুলোতে পানি রয়েছে। পানি কমলেও তাদের ভোগান্তি কমেনি। বন্যার পানি কমলেও হতাশা আর দুশ্চিন্তায় পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার পরিবারগুলো। চরাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক যাদের জীবন-জীবিকা চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। পানি নেমে গেলেও বন্যার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন দিনমজুর এই পরিবারগুলো। বন্যাকবলিত এসব মানুষের জন্য বরাদ্দ হওয়া ত্রাণও জোটেনি বলে অভিযোগ ছিল এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষের।
গোঘাট এলাকার ভুট্টু মিয়া বলেন, আমার বাড়িতে পাঁচ দিন ধরে বন্যার পানি ছিল। গত দুই-তিন দিন ধরে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলো আমাদের দুর্ভোগ কিন্তু কমেনি। তিনি আরও বলেন, বন্যা এসে কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। আয় নাই অনেক কষ্ট করে দিন যাচ্ছে। পাঁচদিন পানিতে ডুবে থাকলাম কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান খোঁজ নেয়নি।
একই এলাকার সাহেরা বেগম বলেন, বেশিরভাগ বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও আমার বাড়ি থেকে এখনো পানি নেমে যায়নি। পানিতে থাকতে থাকতে পায়ে ঘা ধরেছে। আমরা গরিব মানুষ কোনো ত্রাণ পায়নি।
কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, চারদিন থেকে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনো চরাঞ্চলের বেশ কিছু বাড়ি ঘরে পানি রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৬৫ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৯ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তা বিতরণ করা হয়েছে। এনজিওরাও সহযোগিতা করেছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, চলমান বন্যায় সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। গত চারদিন থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহেই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।