প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ এমন হওয়া উচিত যেখানে মানুষ স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে ন্যায়বিচার পাবে। এমন একটি পরিবেশ আমরা করতে পারি। এটি কেবল জজদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, আইনজীবীদেরও সহযোগিতা থাকতে হবে। মামলা জটের কারণে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।’
প্রধান বিচারপতি শনিবার (৫ আগস্ট) সকালে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মামলার বিচারে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন মানুষ যদি বছরের পর বছর আদালতে ঘোরেন, ন্যায়বিচার না পান আর তিনি যদি বলেন, “এ দেশে বিচার-আচার নেই,” তাহলে সেটি অন্যায় হবে না। এই যশোরের আদালতেও ২০ বছরের বেশি সময় ধরে মামলা পেন্ডিং রয়েছে। ওই লোকগুলোকে আমরা ন্যায়বিচার দিতে পারিনি। এর জন্যে দায়ী কে? হয় বিচারক, নইলে আইনজীবী। আমার মনে হয়, বিচারক, আইনজীবী এবং প্রসেস দায়ী।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষকে এগিয়ে নিতে হলে জুডিশিয়ারিকে শক্তিশালী করতে হবে। আর জুডিশিয়ারিকে শক্তিশালী করতে হলে বার ও বেঞ্চের মধ্যে একটা গভীর বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় ন্যায়বিচার সম্পন্ন সম্ভব হবে না।’
তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা বেঞ্চকে সহায়তা করবেন। কেননা ওইসব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ আমাদেরই স্বজন।’
অর্থনীতির চালিকাশক্তি দেশের কৃষক-শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাবারের সংস্থান হতো না। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা অনেকের মনে আছে। কিন্তু আজ সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করছেন দেশের কৃষক-শ্রমিক, বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিক আর প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তারাই দেশের অর্থনীতিকে সচল করে রেখেছেন।
‘আর আমরা যারা শিক্ষিত মানুষ আছি, যারা আইনজীবী, বিচারক– আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন না করি, জুডিশিয়ারির গতি বাড়াতে না পারি, তাহলে মনে হবে তারাই (কৃষক-শ্রমিক) আসল মানুষ, তারাই দেশ গড়ছেন। আর আমরা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম।
এর আগে সকালে তিনি যশোর জেলা জজ আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের বসার স্থান ‘ন্যায়কুঞ্জে’র ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন এবং পরে জেলা জজশিপের বিচারকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
আদালত চত্বরে ন্যায়কুঞ্জের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা ও আইনজীবীদের জন্য বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ হলেও দেশের মালিকরা আদালত চত্বরে বসার স্থান পান না। তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করেই ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণ করা হচ্ছে। সারা দেশের আদালতে এ ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রত্যেক জেলাকে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধনকালে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শামসুল হক, নারী ও শিশু দমন নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম কবীর, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা জাহাঙ্গীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার মজুমদার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্ত্তজা ছোট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।