যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, যদি শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে, তাহলে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনা করবেন তিনি। মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন বাইডেন।
মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সহানুভূতিশীল সংবাদমাধ্যম বেট-কে মঙ্গলবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি বলেছেন, “যদি আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং চিকিৎসকরা বলেন— আপনার এই সমস্যা আছে, ওই সমস্যা আছে….তাহলে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।”
প্রসঙ্গত, এই প্রথম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আর এই সাক্ষাৎকার প্রদানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জিন পিয়েরে হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে জানান, বাইডেন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এই মুহূর্তে মৃদু উপসর্গে ভুগছেন।
আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।
বয়সজনিত কারণে ডেমোক্রটিক পার্টির অনেকেই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে চলেছেন। অতি সম্প্রতি ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি এবং বাইডেনের বিশেষ আস্থাভাজন অ্যাডাম শ্চিফও তাকে ‘নির্বাচনের মশাল অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেন, “আমি (প্রার্থিতা) সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এত কিছু ভাবিনি। আমার ধারণাতেও ছিল না যে এই ব্যাপারটি নিয়ে (দলের ভেতর) এই মাত্রার বিভক্তির সৃষ্টি হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একজন নাগরিক সর্বোচ্চ দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো দেশের প্রেসিডেন্ট হন ট্রাম্প। আবার ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে পরাজিত করা জো বাইডেনও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন।
এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে তাই ট্রাম্প এবং বাইডেন— কারোর সামনেই সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। উভয়েই দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মরিয়া।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের আয়োজনে গত ২৮ জুন প্রথমবারের মতো নির্বাচনী বিতর্ক হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেনের মধ্যে। বিতর্কে দেশের অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী আগমণ ইস্যুতে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প; কিন্তু স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসপূর্ণ যুক্তি দিয়ে সেসব সমালোচনা খণ্ডন করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হন বাইডেন। তাকে বেশ ক্লান্তও দেখা যাচ্ছিল সে সময়।
বিতর্কের পর তাৎক্ষণিক এক জরিপে জানা গেছে, বিতর্ক অনুষ্ঠানটি দেখেছেন— এমন দর্শকদের মধ্যে ৬৭ শতাংশেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখতে চান।
ওই বিতর্কের পর বাইডেনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ইস্যুতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় ডেমোক্রেটিক পার্টিতে। দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ দাতা জানান, বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ডেমোক্রেটিক পার্টির তহবিলে অর্থ প্রদান করা বন্ধ করে দেবেন তারা।
তবে বাইডেন এবারও এসব সমালোচনা গ্রাহ্যের মধ্যে আনছেন না। কিছুদিন আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার সামনে এসে আমাকে (প্রার্থিতা প্রত্যাহারের) আদেশ দেন, কেবল তাহলেই আমি তা করতে পারি।”