তিনিই অ্যামেরিকাকে চিনিয়েছিলেন ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বের কাছে। ১৪৯২ সালে। কিন্তু অ্যামেরিকায় বিক্ষোভকারীদেরমতে, কলম্বাস হলেন গণহত্যার প্রতীক। তিনি অ্যামেরিকার আদি বাসিন্দাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিলেন। তাই একই দিনে দুই শহরে কলম্বাসের মূর্তির মাথা ভাঙা হলো।
অ্যামেরিকায় কলম্বাসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই কলম্বাস দিবস পালনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন অনেকে।
জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর অ্যামেরিকা জুড়েই বিক্ষোভ চলছে। সেই ক্ষোভ এ বার আছড়ে পড়েছে কলম্বাসের মূর্তির ওপর। ভার্জিনিয়া ও বস্টনে। ভার্জিনিয়ায় মূর্তির মাথা ভেঙে বিক্ষোভকারীরা তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। তারপর মূর্তিটি একটি লেক-এ ফেলে দেওয়া হয়। বস্টনে মূর্তির মাথা ভেঙে পাশে তাঁরই নামাঙ্কিত পার্কে ফেলে দেওয়া হয়।
বস্টনের মেয়র মার্টিন জে ওয়ালশ জানিয়েছেন, ”আমরা এর নিন্দা করছি। এই ধরনের কাজ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।” অতীতে বেশ কয়েকবার এই মূর্তি আক্রান্ত হয়েছে। এ বার মূর্তির মাথা ভাঙার পর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারা এই কাজ করেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। আর মূর্তি আপাতত সরিয়ে নিয়ে সারানোর কাজ করা হবে। তবে ওয়ালশ জানিয়েছেন, ”বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই মূর্তির ঐতিহাসিক গুরুত্ব পুনর্বিবেচনা করা হবে।”
বস্টন গ্লোবাল নিউজপেপার জানিয়েছে, ২০০৪ সালে মূর্তিতে লাল রঙ লাগিয়ে লিখে দেওয়া হয়, ‘খুনি’। ২০০৫ সালে আবার মূর্তির গায়ে লাল রঙ দিয়ে লিখে দেওয়া হয়, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’।
ভার্জিনিয়াতে কলম্বাসের মূর্তি লেকের জলে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা লিখে দিয়েছেন, ‘কলম্বাস গণহত্যার নায়ক’।
কলম্বাস সম্পর্কে ধারণাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে। একসময় তাঁকে অত্যন্ত সাহসী দেশ আবিষ্কারক বলা হত, যিনি অ্যামেরিকাকে বাইরের লোকের কাছে চিনিয়েছিলেন। কিন্তু পরে অনেক গবেষক তাঁর অন্য রূপের কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, কলম্বাস ছিলেন অত্যাচারী, প্রচুর লোককে ক্রীতদাস করেছেন এবং অ্যামেরিকার আদি বাসিন্দাদের নির্বিচারে মেরেছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রিচমন্ডে ১৮৯১ সালে স্থাপন করা জেনারেল উইলিয়াম কার্টারের মূর্তি, মিশিগানের সাবেক বর্ণবাদী মেয়র অরভিল হুবার্টের মূর্তিসহ বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির মূর্তি বিক্ষোভকারীরা ভেঙে ফেলেছে ৷ ব্রিটেনেও সম্প্রতি ক্রীতদাস ব্যবসায়ীর মূর্তি ভাঙা হয়েছে। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন কলম্বাস। সূত্র: ডয়েচে ভেলে