বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এসময় উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি বাস ও বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ভাঙচুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টা থেকে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বরিশাল নগরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরি জোয়ার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত সোমবার বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোয়াদের কথাকাটাকাটি হলে বিষয়টি জোয়া ববি শিক্ষার্থী তার বন্ধুদের জানায়। পরে তারা সেখানে গেলে জানতে পারে জোয়া ও তার মাকে হেনস্তা-অপমান করা হয়েছে। এরপর বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় জোয়ার বন্ধুরা। পরে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে আসে। পরে হামলা ও হেনস্তার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার বিকেলে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করে ববি ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নগরের বটতলা এলাকায় ববির দুই শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে মারধর করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। তখন প্রাণ বাঁচাতে ওই দুইজন দৌড়ে পাশেই থাকা বটতলা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন।
সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে রাত ১২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে সেখানে এলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে বাসের চালকসহ ১৫/২০ জন আহত হন। পরে সহপাঠীদের মারধর করার খবর পৌঁছলে বাস-ট্রাক বোঝাই হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরের বটতলা এলাকার আশপাশে এসে জড়ো হয়। অন্যদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাস ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। এসময় বিভিন্ন স্থানে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে ববি শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। হামলার প্রথম পর্যায়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পালটা হামলা চালানোর চেষ্টা করলেও সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদেরসহ সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, বিএম কলেজের এক শিক্ষার্থী যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি বিরোধীয় জমি দখলের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে হেনস্তা করেছে। আর তার প্রতিবাদ জানাতে গেলে ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিরোধ সমাধানের চেষ্টা চালাতে গিয়ে সমন্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফিসহ বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে রাতে ববি শিক্ষার্থীরা শুধু বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নয়, প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হল ও বেশ কিছু বাস ভাঙচুর করেছে।