চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে জাহাজে হত্যাকান্ডের শিকার সাতজনের একজন মাগুরার সজীবুল ইসলাম। ছেলের এমন মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাবা দাউদ মোল্যা। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেস্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি মারা যান এদিকে, ছেলের নির্মম হত্যাকান্ডের শোকে বাবার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ছেলে সজিবুলের মৃত্যুর খবর শোনার পর কেঁদেই চলেছেন বাবা দাউদ মোল্লা। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন স্বজনেরা। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।
স্বজনরা জানায়, গত পাঁচ বছর ধরে জাহাজের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছিল সজিবুল। সম্প্রতি জাহাজের চাকরিতে পদোন্নতি পেতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। সেই ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। মাঝের এই সময়টায় অলস বসে না থেকে সপ্তাহদুয়েক আগে এমভি আল বাখেরা জাহাজে গ্রিজার পদে চাকরি নেন।
নিহত সজীবুলের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। মাস পাঁচেক আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি।
সজিবুলের মামা আহাদ সর্দার শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে সজিবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আজ ওর বিয়ের পাঁচ মাস পূর্ণ হবে। পদোন্নতি হলে বেতন বাড়বে, বড় জাহাজে চাকরি হবে এ কারণে পরীক্ষা দিয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে বাড়িতে ধান কাটার কাজ করে গেছে। যাওয়ার সময় বাড়িতে বলে গেছে রেজাল্টের অপেক্ষায় ঘরে বসে না থেকে ছোট একটা জাহাজে কাজ করে আসি, তাতে কিছু রোজগার হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
জাহাজে নিহত ব্যক্তিদের আরেকজন হলেন একই ইউনিয়নের চর যশোবন্তপুর গ্রামের আনিচুর রহমানের ছেলে মো. মাজিদুল ইসলাম (১৬)। মাজিদুল ঝামা বরকাতুল উলুম ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাদরাসা বন্ধ থাকায় জাহাজে কাজ নিয়েছিল এ কিশোর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহম্মদপুর ও নড়াইল সীমান্তবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের বহু মানুষ জাহাজে চাকরি করেন। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এমভি সুলতান সানজানা নামের লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় মহম্মদপুর পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চারজন নিহত হন। সোমবার এমভি আল-বাখেরা নামের ওই জাহাজ থেকে মোট সাতজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে নৌ
পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচজনকে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর বাইরে গুরুতর আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা খালের মুখ এলাকায় মেঘনা নদীর একটি ডুবোচরে জাহাজটি নোঙর করা ছিল। সোমবার বেলা তিনটার দিকে নৌ-পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রক্তাক্ত দেহগুলো জাহাজের কর্মীদের ঘুমানোর কক্ষে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। কারও কারও মাথায় গভীর ক্ষত দেখা গেছে। কারও কারও ছিল গলা কাটা। শরীরের অন্যান্য স্থানেও আঘাত ছিল।
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহমান জানান, জাহাজে হত্যাকান্ডের শিকার সজিবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর সংবাদ রাতেই জানতে পেরেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।