প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
গাজায় হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি ও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ও অন্যান্য কয়েকটি শহরে পুলিশের সাথে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় আটক সব জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে শনিবার ইসরায়েলের কয়েকটি শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ইসরায়েলি। তারা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ এবং আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
গাজায় জিম্মিদের পরিবার তেল আবিব, সিজারিয়া, রেহোভোত এবং হাইফাসহ অন্যান্য শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের ‘‘মেমোরিয়াল ডে’’ পালনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এই বিক্ষোভ করে তারা।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ইসরায়েলি পতাকা এবং গাজায় আটক জিম্মিদের ছবি সম্বলিত ব্যানার দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা জিম্মিদের জীবিত ফেরত আনতে ইসরায়েলের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ২৪০ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে হামাস। হামাসের আকস্মিক ওই হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন। পরে ওই দিনই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
গত নভেম্বরে কয়েক দফার যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ১০০ জনের বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, গাজায় হামাসের হাতে এখনও প্রায় ১৩২ জন জিম্মি রয়েছেন; যাদের মধ্যে ১২৮ জনকে ৭ অক্টোবর ধরে নিয়ে যায় হামাস। এই ১২৮ জিম্মির মধ্যে মাত্র ৯২ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ৭ অক্টোবর অপহরণের শিকার তামির আদরের মা ইয়েল আদর। গত জানুয়ারিতে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা অবস্থায় তার ছেলে নিহত হন বলে জানিয়েছেন এই নারী। তিনি বলেন, ‘‘কেবল তার ছেলের মরদেহ ফেরত চেয়েছিলেন তিনি; যাতে তাকে যথাযথভাবে দাফন করতে পারেন।’’
ইয়েলে আদর বলেন, ‘‘৯০ দিন ধরে আমরা তার জীবিত ফিরে আসার জন্য লড়াই করেছি। আমরা ৯০ দিন এই আশায় ছিলাম যে, তামির আমাদের কাছে, পরিবারের মাঝে ফিরে আসবে। কিন্তু সে আর বেঁচে নেই। তার জীবিত ফেরার আশা খবরের সাথে মিলিয়ে গেছে।’’
এছাড়া নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরোধিতায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করে তারা বলেছেন, কেবল নেতানিয়াহুর কারণে জিম্মি চুক্তি হচ্ছে না। নেতানিয়াহু কেবল জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে বাধা দিচ্ছেন না। তিনি ইসরায়েলকে সাফল্যও পেতে দিচ্ছেন না। হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্ত করতে আমাদের নেতানিয়াহুর কাছ থেকে মুক্ত হতে হবে।