ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম কমানোর জন্য একটি সাহসী নতুন পরিকল্পনা প্রবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নীতির আওতায়, অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় কম দামে বিক্রি হওয়া ওষুধের দামকে রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সূত্রের মতে, এটি মূলত মেডিকেয়ার এবং মেডিকেড কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। খবর রয়টার্স
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সরকারি কর্মকর্তারা এই নীতির উপর কাজ করছেন, যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রগুলো আরও বলছে, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য এটি একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ এটির মাধ্যমে মার্কিন বাজারের ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের বৃহত্তম বাণিজ্য সংগঠন ‘পিএইচআরএমএ’ ইতোমধ্যেই কংগ্রেসে লবিং শুরু করেছে, যাতে এই নীতি কার্যকর না হয়। সংগঠনটি বলছে, আন্তর্জাতিক রেফারেন্স প্রাইসিং বাস্তবায়িত হলে, এটি মার্কিন উদ্ভাবন এবং শিল্পের জন্য একটি বড় ধরনের ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ হয়ে দাঁড়াবে।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চমানের ওষুধের দাম পরিশোধ করা হয়, যা প্রায় তিনগুণ বেশি হতে পারে অন্য উন্নত দেশের তুলনায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এ ধরনের একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন, তখন এটি আদালতের মাধ্যমে রোধ করা হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন পূর্বে দাবি করেছিল, আন্তর্জাতিক রেফারেন্স প্রাইসিং নীতি প্রয়োগ করলে সরকার ৭ বছরের মধ্যে ৮৫ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারবে। এই পরিকল্পনাটি মার্কিন সরকারের বার্ষিক ৪০০ বিলিয়ন ডলার ওষুধ খরচের বড় একটি অংশ কমিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান। ভেরড্যান্ট রিসার্চের স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ আনা ক্যালটেনবেক বলেছেন, ‘সেন্টার্স ফর মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিকেড সার্ভিসেস (সিএমএস) এর কর্মী সংখ্যা সীমিত। এমন একটি জটিল নীতি বাস্তবায়নে প্রচুর জনবল এবং সংস্থান প্রয়োজন হবে, যা বর্তমানে সিএমএস’র কাছে নেই। তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘ওষুধের ব্যাপক পরিমাণ এবং বিভিন্ন দেশে ওষুধের ভিন্ন দামসহ নানা সমস্যার কারণে, এই নীতি বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হতে পারে।’
মেডিকেয়ারের জন্য প্রথম ১০টি দামি ওষুধের দাম আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে দেশটিতে এসব ওষুধের দাম এখনও বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে, ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইবের শীর্ষ বিক্রিত রক্ত পাতলা ওষুধ ‘এলিকুইস’ এর দাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০৬ ডলার, যেখানে সুইডেনে এই একই ওষুধের দাম মাত্র ১১৪ ডলার।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন মেডিকেয়ারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রেফারেন্স প্রাইসিং নীতির একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করতে পারে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে বাজারের সব অংশে বিশাল পরিবর্তন আসতে পারে।
ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের শীর্ষ সংগঠন ‘পিএইচআরএমএ’ এবং অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। তারা দাবি করছে যে, এটি উদ্ভাবনমূলক গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং মার্কিন স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন উদ্যোগ কেবল ওষুধ প্রস্তুতকারক শিল্পের জন্য নয়, বরং মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে পারে। যদিও এর বাস্তবায়নে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে এটি মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে নতুন দিশায় নিয়ে যেতে পারে, এমনটিও মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।