ইরানের ওপর সপ্তাহব্যাপী হামলার পর শনিবার (২১ জুন) ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইতোমধ্যে তেহরানের ‘পরমাণু কর্মসূচি’ অন্তত ২-৩ বছর পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। একদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানের হাতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় আছে”-এর মধ্যে সমঝোতায় না এলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
শনিবার নতুন করে ইরানের কেন্দ্রীয় অংশে ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ ও উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোর ওপর বিমান হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দেশটি বলছে, তাদের এসব হামলার লক্ষ্য—ইরান যেন পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে। যদিও ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং তারা কোনো বোমা বানাতে চায় না।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার জার্মানির বিল্ড পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, আমরা ইতোমধ্যে তাদের পরমাণু বোমা তৈরির সম্ভাবনা অন্তত দুই বা তিন বছর পিছিয়ে দিতে পেরেছি।” তিনি আরও বলেন, “এই হুমকি পুরোপুরি সরাতে আমরা যা কিছু করা সম্ভব, তাই করব। হামলা বন্ধ হচ্ছে না।”
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি এই যুদ্ধে জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেননি, তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েল যখন যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, তখন তাদের হামলা থামানোর জন্য বলাটা “কঠিন”।
এদিকে জেনেভায় শুক্রবার ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের শীর্ষ কূটনীতিকরা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবারো আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, “আমরা ইরানকে বলেছি যেন তারা বাকি পক্ষগুলোর সঙ্গে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনার পথ বিবেচনা করে। যদিও আমরা নিজেরাও চাই হামলা বন্ধ হোক।”
তবে বৈঠকের পর এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “যতক্ষণ না এই আগ্রাসন থামছে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত নই।”
ট্রাম্প এই ইউরোপীয় কূটনৈতিক প্রয়াসকে নাকচ করে বলেন, “ইরান ইউরোপের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। ওরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। ইউরোপ কোনো সাহায্য করতে পারবে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র হামলায় যোগ দেয়, তাহলে ইরানের দুর্গম পরমাণু স্থাপনাগুলোর (বিশেষ করে পাহাড়ের নিচে নির্মিত ফোর্দো কেন্দ্র) ওপর ‘বানকার-বাস্টার’ টাইপ শক্তিশালী বোমা দিয়ে আঘাত হানতে পারে—যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে।