ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য ইরানকে আল্টিমেটাম দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি জানিয়েছে, ২৯ আগস্টের মধ্যে ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসে চুক্তি করতে হবে, তা না হলে ১০ বছর আগে প্রত্যাহার করা নিষেধাজ্ঞা পুনরায় প্রয়োগ করবে তারা।
এক টেলিফোন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি সম্পাদনের জন্য আগস্ট মাসের শেষ দিনকে চূড়ান্ত সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করতে সম্মত হয়েছেন।
ইইউর এক সভায় ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট বলেন, ‘ফ্রান্স ও তার অংশীদাররা ১০ বছর আগে প্রত্যাহার করা অস্ত্র, ব্যাংক এবং পারমাণবিক সরঞ্জামের ওপর বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার ন্যায্যতা রাখে। ইরানের কাছ থেকে দৃঢ়, বাস্তব এবং যাচাইযোগ্য প্রতিশ্রুতি না পেলে আমরা আগস্টের শেষের দিকে তা করব।’
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইউরোপের দেশগুলো ইরানের পারমাণবিক ইস্যু থেকে অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছিল। তবে, নতুন করে এ ধরনের আল্টিমেটাম, ইউরোপের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টের শেষ পর্যন্তসময়সীমা এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করে যা ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের দিকে পরিচালিত করতে পারে। এর ফলে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—ইরানের সঙ্গে আলোচনায় সুযোগ পেতে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া জুনে মার্কিন হামলার ফলে সৃষ্ট ক্ষতির পর ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্গঠনের চেষ্টা করা থেকে বিরত রাখতে জাতিসংঘের পারমাণবিক পরিদর্শককে ইরানে দেখতে চায় ইউরোপীয় শক্তিগুলো। নতুন চুক্তি হলে, জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়ের অধীনে নিষেধাজ্ঞা স্ন্যাপব্যাক (আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া) শুরু হবে, যার ফলে জাতিসংঘের ছয়টি প্রস্তাব পুনর্বহাল বাধ্যতামূলক হবে।
এর মধ্যে একটি পুনর্বহাল প্রস্তাব হলো—ইরানকে গবেষণা ও উন্নয়ন স্তরসহ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কিত সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। আরেকটি পুনর্বহাল প্রস্তাব হলো—জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বা এই কার্যক্রমে সহায়তা করতে পারে এমন যেকোনো জিনিসপত্র, উপকরণ বা প্রযুক্তির স্থানান্তর রোধ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, পুনর্বহাল প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইরানের সমস্ত তেল রপ্তানি, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় ইরানের প্রবেশাধিকার এবং সাধারণ বাণিজ্য যোগাযোগ বন্ধ করবে না। তবে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সম্প্রতি বলেছেন, ‘স্ন্যাপব্যাক সক্রিয়করণের অর্থ ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরোপের ভূমিকার অবসান হবে এবং তিনটি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার বিন্দু হতে পারে। এটি এমন একটি বিন্দু যা কখনও মেরামত করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপীয়দের একটি বড় ভুল হলো তারা মনে করে যে তাদের হাতে থাকা স্ন্যাপব্যাক হাতিয়ার তাদেরকে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেয়, যদিও এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যদি এই দেশগুলো স্ন্যাপব্যাকের দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে তারা ইরানের পারমাণবিক ইস্যুর সমাধানকে আরও জটিল এবং কঠিন করে তুলবে।’