দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনীকে পরাজয়ের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়া গিয়েছেন। রাশিয়ার কাছ থেকে দ্রুত যাতে এম ৪০০ ক্ষেপনাস্ত্র রোধ করার সরঞ্জাম ভারত পায় তার জন্য মঙ্গলবার সচেষ্ট ছিলেন রাজনাথ। একাধিক বৈঠককরেছেন। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাশিয়া গেছেন। এরপরই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস জানায়, দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠকে বসবেন।
কিন্তু ভারতে প্রতিরক্ষামন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, রাজনাথের সঙ্গে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কোনও আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে না। দুজনের মধ্যে দেখা, সৌজন্য বিনিময় হবে মাত্র। সাধারণত, কোনও মঞ্চে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী উপস্থিত থাকলে তাঁরা আলাদা করে বৈঠক করেন। তবে দুই দেশের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের বৈঠক বুধবার হতে পারে।
কিন্তু ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি এখনই এই ধরনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যেতে চাইছে না। ইতিমধ্যে সর্বদলীয় বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য নিয়ে ভারতে প্রচুর জলঘোলা হচ্ছে। শুধু কংগ্রেস নেতারাই নন, প্রাক্তন সেনা কর্তা থেকে শুরু করে অনেক বিশেষজ্ঞই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিজেপি-র রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রমনিয়ান স্বামী প্রতিরক্ষায় কম বাজেট বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, ২০১৫ থেকে প্রতি বছর বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমেছে। জিডিপি-র সঙ্গে তুলনা করলে তো ১৯৬১-৬২র পর এ বারের মতো এত কম বরাদ্দ আর হয়নি।
লাদাখেপ্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্য হলেও কবে সরবে, কীভাবে সরবে তা ঠিক হয়নি। এই অবস্থায় চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে রাজনাথ নতুন করে কোনও বার্তা দিতে চাইছেন না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ”এই ধরনের বৈঠক হলে তার একটা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বার্তা থাকে। লাদাখের পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট টালমাটাল। এই অবস্থায় বৈঠক করতে হলে নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি নিয়ে করতে হয়। আলোচনা সফল করার জন্য একটা কূটনৈতিক প্রস্তুতি থাকে। সে সব ছাড়াই বৈঠকে গেলে আরেকটা নিস্ফলা আলোচনার ঝুঁকি নিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে সেটা কেন নেবেন রাজনাথ?”
অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধানএম এম নবরণে এখন লে-তে। মঙ্গলবার তিনি একের পর এক বৈঠক করেছেন। সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেনা সমাবেশ এবং কৌশলগত বিষয় তাঁর আলোচনায় উঠে এসেছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। বুধবারও তিনি সারাদিন ধরে বৈঠকে ব্যস্ত থাকবেন। তিনি ফরোয়ার্ড পোস্টও পরিদর্শন করতে যাবেন।
লে-র আকাশে সারা দিনই যুদ্ধ বিমান এবং বায়ুসেনার হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে পাক খেয়ে চলে আসছে। সেনা সূত্র বলছে, ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপনাস্ত্র বসানো হয়েছে। দশ হাজারের মতো সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পাহাড়ে যুদ্ধ করার ব্যাপারে দক্ষ শিখ, গোর্খা, আইটিবিপি জওয়ানদের বেশি করে মোতায়েন করা হয়েছে।
ফলে প্রবল উত্তেজনা রয়েছে। লে শহর থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা খুব দূরে নয়। দেড়শো কিলোমিটারের মধ্যে। শহরের লোকের মধ্যে তাই আতঙ্ক রয়েছে। যদি উত্তেজনা ও সংঘর্ষ বাড়ে, পরিস্থিতি যদি যুদ্ধের দিকে যায়, তা হলে তার প্রথম আঘাত আসতে পারে লে-র ওপরে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে