দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ”চীনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা এবং সীমান্ত চুক্তি ভেঙেছে। মে মাসের গোড়া থেকে চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিপুল পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ করেছে। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই চীন স্থিতাবস্থা ভাঙার চেষ্টা করছে। তারা অন্যায্য দাবি জানাচ্ছে। চীনের সেনার ব্যবহার পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছে। গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে চীনের সুরবদল তার একটা উদাহরণ।”
পাল্টা অভিযোগ করেছে চীনও। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সুং ওয়েংদুং সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, ”গালওয়ানে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের দায় কোনোভাবেই চীনের নয়। আমাদের আশা, ভারত এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হয়।” সংঘর্ষের দায় ভারতের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছেন সুং। চীনের অভিযোগ, ভারতই তাঁদের এলাকায় ঢুকে হামলা করেছে।
অনুরাগের দাবি,”ভারত কখনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়নি। ভারতের যা নির্মাণ তা নিজেদের দিকে এবং নিয়ম মেনে। চীন সেই ভূমিকা নেয়নি। তাই বারবার সংঘাত হচ্ছে।। ভারত একতরফা স্থিতাবস্থা লংঘন করেনি। কিন্তু চীন দ্বিপাক্ষিক যাবতীয় চুক্তি, বিশেষ করে ১৯৯৩ সালের চুক্তি ভঙ্গ করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সেনা সমাবেশ করেছে এবং স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করেছে। অতীতে তাঁরা মাঝে মাঝে এই কাজ করেছে। কিন্তু এ বার তাঁরা দুই দেশের সম্মতিতে যে সব নিয়ম চালু করা হয়েছিল, তা সবই ভেঙেছে।”
বোঝাই যাচ্ছে, বেশ কড়া বিবৃতি দিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। বুধবারই ভারত ও চীনের ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন বা ডব্লিউএমসিসি-র বৈঠক হয়েছে। ভিডিও বৈঠকে কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেনি দুই দেশ। সূত্র জানাচ্ছে, সেখানেই ভারত ও চীন একে অপরকে দোষারোপ করেছে। তারপর দুই পক্ষের তরজা থেকে মনে হচ্ছে, আলোচনা খুব বেশিদূর এগোয়নি। ফলে দুই পক্ষ সেনা সরানোনিয়ে মতৈক্যে পৌঁছনোর কথা বললেও, সেটা কবে থেকে শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না।
লাদাখের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উত্তেজক। সেনা প্রধান দুই দিন লাদাখ সফর করার পর দিল্লি ফিরেছেন। তিনি চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতের কাছে রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার পর লাদাখে সেনা মোতায়েন নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ভারত।
লে শহরের অবস্থা আগের মতোই। সমানে যুদ্ধবিমান উড়ছে। পাক খাচ্ছে, সেনা হেলিকপ্টার। লে শহর থেকে বেরলেই পুলিশ ও সেনার অসংখ্য চেক পোস্ট। সমানে সেনার গাড়ি যাচ্ছে। সূত্র জানাচ্ছে, গালওয়ানে ভারত ও চীনের সেনা একেবারে মুখোমুখি রয়েছে। একাধিক বলয়ে সেনা রয়েছে। সবমিলিয়ে এই অঞ্চলে ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। চীনও সমানসংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে।
তবে লাদাখে সংঘর্ষের পর এই প্রথমবার চীনের তরফে সরকারিভাবে স্বীকার করা হলো যে, তাঁদের সেনাও মারা গিয়েছে। চীনের বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা হে জিয়াংখি বলেছেন, সংঘর্ষে চীনের সেনাও মারা গিয়েছে। কিন্তু উত্তেজনা বাড়বে বলে কতজন মারা গেছে তা বলা হচ্ছে না। সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। সূত্র: ডয়েচে ভেলে