কোরিয়া যুদ্ধে বিচ্ছন হওয়ার ৬৫ বছর পর স্বজনদের দেখা পেল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা পরিবারগুলোর ৮৯ সদস্য। সোমবার তারা তাদের স্বজেনদের সাথে দেখা করার সুযোগ পায়।
১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত চলা কোরিয়া যুদ্ধের সময় দুই কোরিয়ায় ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিলেন লাখো পরিবারের সদস্যরা৷ সোমবার এমন পরিবারগুলোর ৮৯ সদস্য স্বজনদের সাথে মিলিত হলেন উত্তর কোরিয়ার রিসোর্ট মাউন্ট কুমগাংয়ে (যেটিকে বলা হয় ডায়মন্ড মাউন্টেন বা হীরক পাহাড়)৷ দুই কোরিয়ার মধ্যকার সীমান্ত পার হয়ে দক্ষিণ থেকে তাঁরা উত্তরে এসেছিলেন স্বজনদের সাথে দেখা করতে৷ একদিকে আনন্দ আর অন্যদিকে এতদিন দেখতে না পাওয়ার বেদনা– এক বেদনা-মধুর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে৷
কোরিয়া যুদ্ধে বিচ্ছন হওয়া একজন ৯২ বছরের লি কিউম জিওম তাঁর ছেলের দেখা পেলেন ৬৫ বছর পর৷ যুদ্ধের সময় নবজাতক কন্যাসন্তান তাঁর সঙ্গে ছিল, কিন্তু স্বামী আর ছেলে উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ উত্তর কোরিয়াতে থাকা নিজের পরিবারের ছবি দেখালেন তাঁর ছেলে, যেখানে প্রয়াত স্বামীর ছবিও ছিল৷ লি জানালেন, তিনি কল্পনাতেও ভাবেননি, একদিন ছেলের দেখা পাবেন৷ এমনকি এতদিন জানতেনও না ওরা বেঁচে আছে, না মরে গেছে৷
যুদ্ধের পর দুই কোরিয়া একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছালেও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল৷ সরাসরি চিঠির আদান-প্রদান, টেলিফোনে কথা বলা– সব ধরনের যোগাযোগ ছিল নিষিদ্ধ৷ ২০০০ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক আন্তঃকোরীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর থেকে শুরু হয় এই পুনরেকত্রীকরণ কর্মসূচি৷
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ উত্তর কোরিয়ায় যেতে চানএমন নাগরিকদের বিপুল পরিমাণ আবেদনপত্র পান৷ লটারির মধ্যে থেকে সেগুলো বাছাই করেন তাঁরা৷ তবে উত্তর কোরিয়া ঠিক কীভাবে এদের নির্বাচন করে, সেটা স্পষ্ট নয়৷ তবে এটা ঠিক, পিয়ংইয়ং তাঁদেরই প্রাধান্য দেয়, যাঁরা সরকারের প্রতি আস্থাভাজন এবং অনুগত৷ দুই পক্ষেই আবেদনপত্র গ্রহণ হলো কিনা তা জানতে এমনকি বছরের পর বছর চলে যায়৷ গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় আবেদন করেছিলেন এমন ৩,৮০০ নাগরিক এ বছর মারা গেছেন৷ এমনও দেখা গেছে, বছরের পর বছর অপেক্ষা করার পর মৃত্যুর আগে হয়ত একবারই প্রিয়জনের দেখা পেয়েছেন কেউ কেউ৷ এই দফায় ৯৩ জন নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ কিন্তু এদের মধ্যে চার জনের শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাঁদের পক্ষে সফর করা সম্ভব হয়নি৷
বছরে একবার দুই কোরিয়ার নির্বাচিত মানুষেরা প্রিয়জনের সাথে দেখা করার সুযোগ পান৷ ২০১৫ সালের পর অবশ্য এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কেননা, উত্তর কোরিয়া তখন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করেছিল৷ কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিলে দুই কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ঐতিহাসিক সম্মেলনে অংশ নেন৷ ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন শুরু হয়৷ এরই ফলশ্রুতিতে এ বছর দুই কোরিয়ার মধ্যে এই পুনরেকত্রীকরণ আয়োজন করা হয়েছে৷
বিজয় টিভি/ নিউজ ডেস্ক