জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে গতকাল যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে স্থানীয় সময় সকাল ১১ টায় আয়োজন করা হয় জাতীয় শোক দিবসের এ অনুষ্ঠান।
স্থায়ী মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি শুরু করা হয়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং তাঁদের শহীদ পরিবারবর্গসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অত:পর ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার নেতৃত্বে মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ। এরপর দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। জাতির পিতার জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শণ করা হয়।
বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে এবারের জাতীয় শোক দিবসের এ অনুষ্ঠান বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে মর্মে স্বাগত ভাষণে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। তিনি বলেন, জাতির পিতার সংগ্রাম ও ত্যাগ বিশ্বমানবতাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পথ দেখাবে। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো দেওয়া জাতির পিতা বাংলায় ভাষণের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আজ পৃথিবীর সকল দেশ এজেন্ডা ২০৩০ এর ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আমরা এর অধিকাংশের কথাই খুঁজে পাই’। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে দেওয়া জাতির পিতার সেই ভাষণে শিক্ষা, সাম্যতা এবং সম্মানজনক জীবন ও জীবিকার কথা রয়েছে। তিনি জাতীয়তার সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতাকে স্পর্শ করেছেন। তাঁর এই ভাষণে ফুটে উঠেছে বিশ্ব মানবতার আশা আকাঙ্খা। তিনি শান্তির কথা বলেছেন, মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন, বহুপাক্ষিকতার কথা বলেছেন, উন্নত বিশ্ব ব্যবস্থার কথা বলেছেন, মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের কথা বলেছেন। এমন ভাষণ কেবল তাঁর মতো একজন বিশ্বনেতার পক্ষেই দেওয়া সম্ভব।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী প্রদান করেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে অজৌলে। বাণীতে তিনি বলেন, মানুষের অধিকার আদায় ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম ও ত্যাগের যে আদর্শ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেখে গেছেন তাঁর শাহাদতের চার দশক পরেও বিশ্ব তা স্মরণ করছে।
ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে মর্মে বাণীতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান অর্ন্তভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক সমাজের যে স্বপ্ন দেখে তা-ই যেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া ভাষণে উল্লেখ করেছেন যা ইউনেস্কোর মেমোরি অভ্ দ্যা ওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি