ঈদযাত্রায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও হাউসফুল, সুখ ভাগাভাগি করে ঈদ উযাপন করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। এতে সড়ক-মহাসড়কে, রেলপথ, নৌপথে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। এতে পিছিয়ে নেই আকাশপথও। ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বেড়েছে আকাশপথেও। হাউসফুল যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ রুটের প্রত্যেকটি ফ্লাইট।
জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালানো ৪টি উড়োজাহাজ সংস্থায় বাড়ি যাওয়ার টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে বহু আগে। মিলছে না ঈদের পরে সপ্তাহখানেক পর্যন্ত ঢাকায় ফেরার টিকিটও! যাত্রী চাহিদায় এয়ারলাইন্সগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়েছে। অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিলেও চাহিদামতো টিকিট নেই।
এয়ারলাইন্সগুলোর বিপণন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অভ্যন্তরীণ নয়, ঈদের লম্বা ছুটিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকিটের চাহিদাও বেশ। বিশেষ করে কলকাতা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া যাতায়াতে টিকিটের চাহিদা বেড়েছে।
দেশের ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসরকারি ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা।
আড়ও পড়ুন: গাজীপুরের চন্দ্রা ও চান্দনায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি
ঈদযাত্রায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও হাউসফুল, এয়ারলাইন্সগুলো ঢাকা-সৈয়দপুর, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-যশোর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-বরিশাল রুটে ফ্লাইট চালাচ্ছে। তবে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মাসেতু চালুর পর বরিশাল রুটের যাত্রী কম। সে কারণে অনেক সংস্থা তাদের নিয়মিত ফ্লাইটও বন্ধ করে দিয়েছে ঐ রুটে। একই কারণে যশোর রুটেও যাত্রী কম। তাছাড়া কক্সবাজারে ট্রেন চালু হওয়ায় ঐ রুটেও যাত্রীর চাপ নেই। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাপ ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে।
জানা যায়, সাধারণত কক্সবাজার রুট ছাড়া অন্য রুটের ভাড়া সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু ঈদের আগে-পরে চাহিদার কারণে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকাতেও বিক্রি হয়েছে টিকিট।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. আল মাসুদ খান বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রায় সব অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিট বিক্রি শেষ। যদিও যাত্রীদের সুবিধার্থে ফ্লাইটও বাড়ানো হয়েছে। তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত যাওয়া-আসা মিলে ১৮টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।
বিমান কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত ফ্লাইট শুরু হয়েছে ৪ এপ্রিল থেকে। যা ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর ও বরিশাল রুটে এসব ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও সিলেট ও চট্টগ্রামের যাত্রীরা বিমানের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজগুলোয় ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন।
বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, তাদের এয়ারলাইন্সের ঈদ কেন্দ্রিক টিকিট বিক্রিও শেষ। কোনো কোনো রুটে শতভাগ টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে।
নভোএয়ার জানিয়েছে, দৈনিক ৩০ টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এয়ার আস্ট্রা বলছে, প্রতিদিন বিভিন্ন তারা ২৪ থেকে ২৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা। তাদের টিকিটও শেষ।
বেসরকারি এয়ারলাইন্স এয়ার আস্ট্রা’র ডেপুটি ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন) শাকিব হাসান শুভ গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়মিত ফ্লাইটের বাইরে ঈদ উপলক্ষে দুটি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু করেছেন সৈয়দপুর রুটে। এছাড়াও কক্সবাজার রুটে দৈনিক ৪টি, সিলেটে ৩টি এবং চট্টগ্রামে ৪টি ফ্লাইট নিয়মিত চলাচল করছে।
তিনি আরো বলেন, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ। তবে শেষ পর্যন্ত ঈদ কেন্দ্রিক কোনো ফ্লাইটই ফাঁকা যাবে না।
নভোএয়ারে যোগাযোগ করে জানা যায়, ঈদের ৫দিন আগে ও পরের ৫দিনের ফ্লাইটের ৮০ শতাংশের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন ১৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও ঈদে কোনো অতিরিক্ত ফ্লাইট নেই।
টিকেটের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি মানতে নারাজ এয়ারলাইন্সগুলোর কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, নানা সেগমেন্টে টিকিট বিক্রির অফার দেওয়া হয়ে থাকে। সেখানে বিভিন্ন দামের টিকিট থাকে। যারা আগে টিকিট কিনেছেন, তারা কম দামে পেয়েছেন। পরে চাহিদার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া ঈদের আগে যাত্রী বোঝাই ফ্লাইট গেলেও ফাঁকা আসন নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। একইভাবে ঈদের পরে ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হবে যাত্রীশূন্য। টিকিটের দামে এসব বিষয়ও প্রভাব রাখে।