সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করার বিষয়ে আদালত যে আদেশ দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন।
আদালতের আদেশে রিসিভার নিয়োগ ও সম্পদ জব্দে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে আগামী রোববার ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, মেয়ে ও কয়েকজন স্বজনের সম্পত্তি ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
ওইদিন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, আদালত বেনজীর আহমেদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং গোপালগঞ্জের জমির ৮৩টি দলিল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ এই সময়ে টাকা পয়সা ও জমি হস্তান্তর করা যাবে না।
এরপর শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব জব্দের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে। রিসিভার নিয়োগের বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হবে।”
এসব পদক্ষেপ রোববার নেওয়া হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করলেও তা নিশ্চিত করতে পারেননি।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে সাভানা ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।
তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।
বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।
এরপর ২৩ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা।
সেজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।
একই দিন হাই কোর্ট এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে উঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ।
নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ৮টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
এর আগে গত ২ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বেনজীর।
যারা লেখালেখি করছেন, তাদেরকে ধৈর্য ধরার ‘অনুরোধ’ জানিয়েছে সেদিন তিনি লিখেছেন, “দু একজন অনেক ক্ষিপ্ত, খুব ই উত্তেজিত হয়ে এক্ষুনি সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ লিখে ফেলছেন। দয়া করে সামান্য ধৈর্য ধরুন।”
পরে ২০ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় ২৫ মিনিটের একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন সাবেক আইজিপি।
তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করেন।
তিনি যেসব সম্পত্তি অর্জনের তথ্যকে ‘মিথ্যা’ বলছেন, কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন বেনজীর।