মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চক্রের ঢুকে অবৈধভাবে ব্যবসা করে হাজার হাজার কোটি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তার স্ত্রী কাশমিরী, মেয়ে নাফিসা কামাল ও ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং ঢাকা-২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে সংস্থাটি। অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক মোহাং নূরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।
ফেনীর প্রভাবশালী সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর অভিযোগ সম্পর্কে জানা যায়, বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন এই সংসদ সদস্য। লাইসেন্স নেয়ার সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। ‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটে বা চক্রে যোগ দেয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী গেছেন নিজাম হাজারীর এজেন্সির নামে। মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মী পাঠানো এজেন্সির তালিকায় ৪ নম্বরে রয়েছে স্নিগ্ধা ওভারসিজ।
ফেনীর আরেক এমপি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এই এজেন্সি একাই ছাড়পত্র নিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর।
ঢাকা-২০ আসনের সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দিক দিয়ে পঞ্চম অবস্থান রয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ কর্মী। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী সাবেক এমপি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৯ হাজার ৮৬১ জন। এই চক্রটি গঠনের সময় মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী খরচ করেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। দেড় বছরে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে এ খাতে। সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে বেশি নেয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জনপ্রতি দেড় লাখ টাকা করে চক্র ফি নিয়ে হাতানো হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।