বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে এলেম আল ফায়দি নামে এক শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনসহ আরও ১৩ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এটি জবি ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় হত্যা মামলা।
বুধবার (২১ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে বাদী হয়ে সামসুল আরেফিন নামে জবির বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী এ মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সূত্রাপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
মামলায় জবি ছাত্রলীগের বাকি আসামিরা হলেন, জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহীম সানিম, বাংলা বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অর্জুন বিশ্বাস, ছাত্রলীগ নেতা পরিসংখ্যান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিনুন মাহফুজ, গণিত বিভাগের ১৩তম ব্যাচের মাহিমুর রহমান বিজয়, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শাহরুখ আলম শোভন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজবুল হাসান, অর্থনীতি বিভাগ ছাত্রলীগের নেতা মীর মুকিত, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন রাজ, গণিত বিভাগের ১৩তম ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম হাসান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের ১৫তম ব্যাচের মাকসুদুল হাসান আরাফাত ও বাংলা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ফারহান লাবিব অপূর্ব।
এছাড়া, মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক কমিশনার ডিএমপি হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ওয়ারীর ডিসি ইকবাল হোসেন, ঢকা-৬ আসনের সাবেক এমপি আবু সাইদ খোকন, ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত মোড়ল ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিক।
মামলার বিষয়ে বাদী সামসুল আরেফিন বলেন, ইতিহাসে একবিংশ শতাব্দীতে এমন নিষ্ঠুরতম ফ্যাসিস্ট, হত্যাকারী, অত্যাচারী, স্বৈরাচার আর আসেনি। যার নিষ্ঠুরতায় পুরো দেশ আজ ট্রমায় ভুগছে। যদিও সে পালিয়ে গেছে। আশা করি সুবিচারের মাধ্যমে সব অনাচারের অবসান ঘটবে। সমাজে ও রাষ্ট্রে সুবিচার আর মানবতা প্রতিষ্ঠায় বিচারের সংস্কৃতি নিশ্চিত করতে হবে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই লক্ষ্মীবাজার এলাকায় জুম্মা নামাজ আদায়ের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ আপামর জনগণকে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী মিছিল শুরু হয়। এই আন্দোলনে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে এলেম আল ফায়দি নামে একজন শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ান সরকারি কবি নজরুল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি লেগে তার মাথার মগজ বের হয়ে যায়।