দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের পর এক দশক পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এলেন।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকায় পৌঁছালে ইসহাক দারকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দারও উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ এপ্রিল ইসহাক দারের ঢাকা আসার কথা ছিল। তবে ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে দেশটির সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিলে দারের সফর স্থগিত করে ইসলামাবাদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দারের দ্বিপক্ষীয় এই সফরে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে গুরুত্ব দেবে ইসলামাবাদ। অন্যদিকে, ঢাকার চাওয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। ওইদিন দুই মন্ত্রী শুরুতে একান্তে এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও এমওইউ সইয়ের কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তৌহিদ-দারের বৈঠকে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সংযুক্তি, কৃষি, নানা পর্যায়ে দুই দেশের লোকজনের চলাচল সুগম করাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় আলোচনায় থাকবে।
পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দেবে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের সম্পর্ক যেখানে এসেছে, তা এগিয়ে নিতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা জরুরি।
দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক অমীমাংসিত তিন ঐতিহাসিক ইস্যুকে বাদ দিয়ে হবে না। অমীমাংসিত বিষয়গুলো হলো একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন ও অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দেওয়া।
বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি হতে পারে। তাছাড়া দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুই দেশের মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা ও চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে।
দ্বিতীয় দিন রোববার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ইসহাক দার।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ঢাকা সফরকালে ইসহাক দার বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। তারই অংশ হিসেবে দার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় দেখা করতে যাবেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে দারের।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ডি-৮ সম্মেলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালের জুলাইয়ে হিনা রাব্বানির আবার ডি-৮ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তিনি তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি হিনার ঢাকায় আসেননি।