বগুড়ায় ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রেম ও বেড়ানোর ছলে ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় মিথুন সরকার (২৯) নামে পুলিশের উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বুধবার (৩১ জুলাই) বিকালে বগুড়ার দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর এ আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) আদালতের স্পেশাল পিপি আশেকুর রহমান সুজন বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য দিয়েছেন।
আদালত সূত্র ও পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত এসআই মিথুন সরকার ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা সদরের ভাতশালা ইউনিয়নের বয়ড়া পালপাড়া গ্রামের সুনীল সরকারের ছেলে। তিনি গত বছরের জুনে বগুড়ার শেরপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোশের মামলার সহযোগিতা চাওয়া নিয়ে তার সঙ্গে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর পরিচয় হয়। এসআই মিথুন সরকার ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে স্থানীয় ওই ছাত্রীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গত বছরের ৩ জুন ওই শিক্ষার্থীর জন্মদিন ছিল। মিথুন সরকার বেড়ানোর কথা বলে কৌশলে তাকে শেরপুরে খন্দকারটোলা এলাকায় এক মাদক ব্যবসায়ী ও পুলিশের সোর্সের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী ঘটনাটি পরিবারকে জানায়। পরিবার থেকে এসআই মিথুন সরকারকে ধরলে তিনি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রতারণা বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থী গত বছরের ১৭ আগস্ট বগুড়ার দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এসআই মিথুনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার পর পত্রিকায় রিপোর্ট হলে তাকে প্রথমে আদমদীঘি থানায় বদলি করা হয়। দুদিন পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বগুড়া পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মিথুন সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল।
এদিকে আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বগুড়াকে নির্দেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই বগুড়ার ইন্সপেক্টর জাহিদ হোসেন মণ্ডল গত ১০ জুন দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে দুজন সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান ছাড়াও অন্যান্য তথ্য দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, পুলিশের বিভাগীয় তদন্তেও ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তবে ওই শিক্ষার্থী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আসামি মিথুন সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯(১) ধারায় আমলে নেওয়ার মতো অপরাধ করেননি। এক্ষেত্রে তিনি উচ্চ আদালতের একটি রায়ের উদাহরণ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই আসামিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ধর্ষণের শিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী পিবিআই কর্মকর্তার দাখিল করা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুন আদালতে নারাজির আবেদন করেন।
আদালতের স্পেশাল পিপি আশেকুর রহমান সুজন জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তার অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং ছাত্রীর দাখিল করা কথপোকথনের রেকর্ড পর্যালোচনা করে আসামি মিথুন সরকারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯(১) ধারার উপাদান আছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন। আদেশটি পালন করতে আদালত থেকে এর অনুলিপি বুধবার বগুড়ার পুলিশ সুপার ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হাসান বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্ত এসআই মিথুন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদালতের আদেশ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হাতে পাইনি। পেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’