আগামী বৃহস্পতিবার(১৪ ই জুন) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত বিশ্বকাপ। আর এবােরের বিশ্বকাপই যাদের হতে পারে শেষ বিশ্বকাপ ।
রাফায়েল মারকুইজ (মেক্সিকো)
বয়স ৩৯ পেরোলেও মাঠের খেলায় এর ছাপ পড়তে দেননি মেক্সিকো ফুটবল দলের অধিনায়ক রাফায়েল মারকুইজ। রাশিয়া বিশ্বকাপে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ২টি রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে চারটি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করার ইতিহাস গড়বেন তিনি। ২০০৬ সালে প্রথমবার মেক্সিকোকে বিশ্ব ফুটবলের আসরে নেতৃত্ব দেন মারকুইজ। এরপর ২০১০ এবং ২০১৪ সালে বিশ্বকাপেও তার নেতৃত্বেই খেলেছে মেক্সিকো। সেইসঙ্গে বিশ্বের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ ৫টি বিশ্বকাপ খেলার কৃতিত্ব অর্জন করবেন তিনি। এর আগে মেক্সিকোর গোলরক্ষক আন্তোনিও কারভালহো এবং জার্মানির লোথার ম্যাথাউস ৫টি করে বিশ্বকাপে খেলেছেন। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে ফুটবলের বিশ্ব আসরে পা রেখেছিলেন তিনি।
টিম কাহিল (অস্ট্রেলিয়া)
বিশ্ব ফুটবলে খুব বড় শক্তি নয় অস্ট্রেলিয়া। তবে আপন মহিমায় ফুটবলের বিশ্ব সেরাদের দলে নিজের নাম লিখেছেন অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড টিম কাহিল। বিশ্বকাপে কাহিলের গোল ছাড়া কোনও ম্যাচ জেতেনি সকারুরা। ২০০৬, ২০১০ এবং ২০১৪ তিনটি বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ৮টি ম্যাচ খেলেছেন কাহিল।এই ৮ ম্যাচে তাঁর পা ছুঁয়ে বল জাল জড়িয়েছে মোট ৫ বার। আসন্ন বিশ্বকাপে কেরিয়ারের চতুর্থ তথা শেষ বিশ্বকাপে নামতে চলেছেন কাহিল। এরই মধ্যে বয়সটা যে ৩৮ পেরিয়েছে কাহিলের।
হাভিয়ের মাসচেরানো (আর্জেন্টিনা)
২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার রানার্স হওয়ার পিছনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন এই হাভিয়ের মাসচেরানো। সেবারের সেমিফাইনাল ম্যাচে ডাচ খেলোয়াড় আরিয়েন রোবেনকে করা তাঁর ট্যাকেল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ট্যাকেলের তালিকায়। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ২০১৪ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের প্রতিটি মিনিট মাঠে ছিলেন এই মিডফিল্ডার।সাহসী ডিফেন্ডিংয়ের মধ্যে দিয়ে দলের রক্ষণভাগ আগলে রাখতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু এরই মধ্যে বয়সের কাটা ছুঁয়েছে ৩৩। তাই রাশিয়া বিশ্বকাপেই সম্ভবত শেষ হতে যাচ্ছে আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের বিশ্বকাপ যাত্রা।
আন্দ্রে ইনিয়েস্তা (স্পেন)
স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা ফুটবলারের নাম আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ইনিয়েস্তার করা গোলেই বিশ্বকাপ জিতে নেয় স্পেন। তিনিই বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যিনি ২টি ইউরো কাপ ফাইনাল এবং ১টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপ দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞে অভিষেক হয় ইনিয়েস্তার। এরপর ২০১০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে স্পেনের হয়ে সবকটি ম্যাচে খেলেছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে এরই মধ্যে ৩৪ ছুঁয়েছে ইনিয়েস্তার বয়স। ছেড়ে দিয়েছেন শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা। রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষেই হয়তো অবসর নিয়ে নেবেন জাতীয় দল থেকেও। আর অবসর না নিলেও ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের কার্টেন রেজারের আগেই যে বুট জোড়া তুলে রাখবেন ইনিয়েস্তা তা নিয়ে হয়তো আর কারোর কোনও সংশয় নেই।
সার্জিও রামোস (স্পেন)
স্পেনের সোনালী দিনের শরিক সার্জিও রামোস। ২০০৮ ও ২০১২ সালের ইউরো জয় থেকে ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে দ্রুত ভুলতে চাইবেন তিনি। ২০১২ সালের ইউরো জয়ের পর বড়মঞ্চে আর তেমন সাফল্য নেই স্প্যানিশদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছে এবার স্পেনকে। স্প্যানিশদের রক্ষণে বড় ভরসার নাম অবশ্যই রামোস। সেই সঙ্গে কর্নার থেকে গোল করায় রামোসের জুড়ি মেলা ভার। ইতিমধ্যেই ৩২ ছুঁয়েছে তাঁর বয়স। পরের বিশ্বকাপে খেলার সম্ভবনা খুব কম। তাই রাশিয়াতেই সম্ভবত শেষ হচ্ছে সের্জিও রামোসের বিশ্বকাপ।
লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইতালির জর্জিও কিয়েলিনিকে কামড়ে রাতারাতি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ। এই ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসিতও হতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের পর অবশ্য বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি। মেসির পাশে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন সুরারেজ। ২০১০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে খেলেন তিনি। তখনও দলের কোচ ছিলেন অস্কার তাবারেজ। সেই তাবারেজ আবারও বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কোচ। এডিনসন কাভানি, লুইস সুয়ারেজের দিকেই তাকিয়ে উরুগুয়ে। ইতিমধ্যেই ৩১ বছর পেরিয়ে গিয়েছেন সুয়ারেজ। চার বছর পর ২০২২ সালে কি বিশ্বকাপে সুয়ারেজকে খেলতে দেখা যাবে? সম্ভবনা কম বলেই মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
‘ছোট থেকেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখে আসছি। সেই বিশ্বকাপ জিতলেও অবসর নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।’ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও অবসর নেবেন না বলছেন সিআর সেভেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৩৩। চার পর ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে রোনালদোর বয়স হবে ৩৭। তাহলে কি বয়সটা কোনও ফ্যাক্টর নয়, ফিটনেসই আসল এই তত্বকে সামনে রেখে এগোচ্ছেন তিনি। রোনাল্ডো যাই বলুন না কেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা কিন্তু রাশিয়াতেই রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ দেখতে পাচ্ছেন।
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
বিশ্বকাপ না জিততে পারলে অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা – পর পর তিন বছর তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও কাপটা হাতের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে আর্জেন্টিনা ও মেসির। ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারার পর হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে নেন মেসি। পরে আবার ফিরে এসেছেন। এবারই মেসির জন্য শেষ সুযোগ, অমরত্ব অর্জনের। মেসি নিজেও জানেন সেটা। এ জন্যই এবার বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের বুটজোড়া পাকাপাকিভাবে তুলে রাখার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
নিউজ ডেস্ক / বিজয় টিভি