আনতারা রাইসা : ক্যাথরিন এলিজাবেথ হুডসন, দুনিয়া যাকে চেনে কেটি পেরি নামে। ছোটবেলায় গান করতেন বিভিন্ন চার্চে। বয়ঃসন্ধিকালে গোস্পেল বা ধর্মীয় সংগীত দিয়ে মিউজিক ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি।
তার প্রথম দুটি এ্যালবাম সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে তার তৃতীয় এ্যালবাম টিনেজ ড্রিম জায়গা করে নেয় বিলবোর্ড সেরা ২০০ তে। এরপর আর তার পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দর্শকদের একে একে উপহার দিয়েছেন টিনেজ ড্রিম, রোর, ডার্ক হর্সের মত জনপ্রিয় গান।
ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর কেটি পেরি বিশ্বের সংগীতজগতের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী তারকা। কিন্তু এ সময়টাই নাকি ছিল তার সবচেয়ে হতাশার সময়। সম্প্রতি ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেটি পেরি জানালেন জানা অজানা নানা কথা।
প্রেম-হতাশা-নতুন বছর নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা সহ আরও অনেক কিছু। চলুন জেনে নেয়া যাক কেমন ছিল সেই সাক্ষাৎকার।
২০১১ সালের কথা। সবকিছু তৈরি। কনসার্টে গাইবেন কেটি। মঞ্চে ওঠার আগে পেলেন একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন স্বামী রাসেল ব্র্যান্ড। সেই খুদে বার্তা পড়ে জানতে পারলেন, রাসেল ব্র্যান্ড আর তাঁর সঙ্গে সংসার করতে চান না।
তারপর চোখ মুছলেন, মঞ্চে উঠলেন, গাইলেন, কাঁদলেন। সেই কান্নাকে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা ভেবেছিল পারফরম্যান্সের অংশ। এভাবেই আমরা সবসময় মনে করি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া মানুষরা সবসময় সুখেই থাকেন। তাদের থাকেনা কোনো কষ্ট, কোনো বেদনা। কিন্তু তারকারা মাঝে মাঝেই তাদের সাহসী জবানবন্দীতে প্রমাণ করে দিয়ে যান তারাও মানুষ, তারাও হতাশার সাগরে ডুবে যেতে পারেন।
সম্প্রতি ভোগ ইন্ডিয়ার কভার স্টোরি তে এসেছেন কেটি পেরি। সেই সাক্ষাৎকারে অকপটে স্বীকার করেছেন তার হতাশার সময়গুলোর পেছনের গল্প, বলেছেন এই যুদ্ধ জয়ের কথাও।
প্রথম হৃদয় ভাঙনের পর কেটি পেরি প্রেম করেছেন আরেক সংগীতশিল্পী জন মেয়ারের সঙ্গে। বাগদানও হলো। তারপর সেই বাগদান ভেঙে যায়। আবার হৃদয় ভাঙে কেটির। তারপর সেই ভাঙা হৃদয় জোড়া লাগাতে কেটির জীবনের রঙ্গমঞ্চে আসেন রবার্ট প্যাটিনসন। একদিন অতীত হয়ে যান ‘টোয়ালাইট’ ছবির এই তারকা।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কেটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডের পার্টিতে হীরার আংটি পরিয়ে দেন ‘ট্রয়’ ছবির তারকা অরল্যান্ডো ব্লুম। এই ওরল্যান্ডো ব্লুম ই এখন তার জীবনের অন্ধকার দূর করে আশার প্রদীপ হয়ে রয়েছেন এমনটিই জানান এই তারকা।
কেটি পেরি তাঁর হতাশার সময়গুলোর কথা বলতে গিয়ে জানান, তখন তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। তখন সারা দিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে থাকতেন।
তাকে নিতে হয়েছে অনেক ধরণের থেরাপি। তার সেই দুঃসময় গুলোতে তাকে সাহস জুগিয়েছেন ওরল্যান্ডো ব্লুম। তিনি জানিয়েছেন তাঁর সর্বরোগের মহৌষধের নাম। বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতে অনেক ধরনের মেডিটেশন করেছেন।
তাঁর মতে, সেরা হলো ‘ট্রান্স সেন ডেন্টাল মেডিটেশন’। এটিই কেটিকে দিয়েছে নতুন জীবন। আরও জানালেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিথ্যা হলো দুঃখ ছাড়া ভালো শিল্প হয় না। শিল্পীদের তাই দুঃখ থাকতে হয়, বিষণ্নতায় ভুগতে হয়।
‘ভোগ’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেটি পেরি বললেন নতুন বছর নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। জানালেন, নানা স্বপ্ন দিয়ে ভর্তি তাঁর ‘বাকেট লিস্ট’।
পরিবেশ সুরক্ষায় তিনি আরো বেশি মনযোগী হতে চান। মনোবিজ্ঞান আর দর্শন নিয়ে পড়তে চান। আর মানুষকে ভালো কিছু করতে অনুপ্রাণিত করতে চান।
৩৫ বছর বয়সী এই তারকা বলেন, ‘১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ আমাকে চোখে চোখে রেখেছে। এই এক যুগে আমি অনেক ভুল করেছি। দিনশেষে আমিও একজন মানুষ। আর জীবনযুদ্ধে হেরে যেতে চাই না। জীবনের ইতিহাসে পড়ে যাওয়ায় গল্পগুলো থাকে না, থাকে উঠে দাঁড়ানোর গল্প।’
অনলাইন নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি