তাঁকে বলা হয় চলচ্চিত্রের ফেরিওয়ালা। মননে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে গেয়েছেন মুক্তির গান। বাইশ বছরের কর্ম জীবনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তৈরি করেছেন এক মাইল ফলক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে মেলে ধরেছেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের আঙিনায়। তিনি বাংলাদেশের বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ।
তারেক মাসুদের জন্ম ১৯৫৬ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে। ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায় পড়াশোনার মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা শুরু। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ‘ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন’ কোর্স শেষ করার পর শুরু করেন প্রথম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের কাজ।
প্রথম প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে তাঁর সময় লেগেছিল সাত বছর। প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের উপর নির্মিত ‘আদম সুরত’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। এরপর বেশ কিছু তথ্যচিত্র, অ্যানিমেশন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি।
১৯৯৫ সালে নির্মাণ করেন প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গান। এটি ছিল ১৯৭৫ পরবর্তী প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক ডকুফিকশনাল চলচ্চিত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি ভ্রাম্যমাণ গানের দলকে নিয়ে নির্মাণ করা হয় প্রামাণ্যচিত্রটি। প্রামাণ্যচিত্রটি ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার লাভ করে।
২০০২ সালে নিজের শৈশবের মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’। চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’ সন্মাননা লাভ করে। ছবিটির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া ছবিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব একাধিক পুরস্কার লাভ করে।
২০০৬ সালে নির্মাণ করেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অন্তরযাত্রা’ ও ২০১০ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’। রানওয়ে চলচ্চিত্রটি তারেক মাসুদকে পৌঁছে দিয়েছিলো অনন্য এক উচ্চতায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রঙ্গনে নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অর্জন করেছিলেন খ্যাতি।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট কাগজের ফুল নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন দেখার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে যান মানিকগঞ্জের সালজানা গ্রামে। ফেরার পথে ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তারেক মাসুদ এবং তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরের।
আজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য এই পরিচালকের নবম প্রয়াণ দিবস। চলচ্চিত্রের ফেরিওয়ালা তারেক মাসুদের নবম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি