আজ রোববার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য পাবে ৮৭ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবার। তাদেরকে দুই কিস্তিতে দেয়া হবে এই পণ্য।
আজ ২০ থেকে ৩০শে মার্চ প্রথম কিস্তি এবং দ্বিতীয় কিস্তি পাবে ৩ থেকে ২০শে এপ্রিল পর্যন্ত। এরই মধ্যে সারাদেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৫৭ লাখ ১০ হাজার উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন ৩০ লাখ পরিবারের নগদ সহায়তার ডাটাবেইজের সঙ্গে এই ৫৭ লাখ ১০ হাজার উপকারভোগী পরিবার নতুন যোগ হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে সিটি করপোরেশন এলাকার ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশেনের ৯০ হাজার পরিবারকে কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। এই দুই নগরীর মানুষকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আসছে রমজানকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজধানী ঢাকা ও বরিশাল সিটি ছাড়া দেশের সব জায়গায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা টিসিবি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজের নির্বাচনি এলাকা রংপুরের কাউনিয়ায় এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই তারা প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। সব ধরনের পণ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার ১২ লাখ ও বরিশাল সিটির ৯০ হাজার বাদ দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে ৮৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে, যারা এই সহায়তা পাচ্ছে। তবে ঢাকা ও বরিশাল সিটিতে বসবাসকারী নিম্নআয়ের নাগরিকরাও টিসিবির ট্রাক সেলের মাধ্যমে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ পাচ্ছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী এককোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন দেশের মোট ৩৮ লাখ ৫০ হাজার সুবিধাভোগী পরিবার। এই সাড়ে ৩৮ লাখ পরিবারের সবাই পাচ্ছেন টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত করা হয়েছে আরও ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। এ কাজে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করছে। সুবিধাভোগী পরিবার নির্বাচিত করতে সরকারের সামাজিক বলয়ের আওতায় থাকা নিম্নআয়ের মানুষের তালিকার বাইরেও নানা বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি এই উদ্যোগের ফলে দেশের ৫ কোটি স্বল্প আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন বলে সরকার মনে করে।
টিসিবি জানায়, ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্বে এককোটি উপকারভোগী পরিবারের মাঝে ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৩ এপ্রিল থেকে এসব পণ্যের সঙ্গে ৫০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি ছোলা যুক্ত হবে।
টিসিবির মাধ্যমে সরকারের এই কার্যক্রম সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে যারা চাপে পড়েছেন, তাদের শক্তি বাড়াতে কার্যক্রম শুরু করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর আওতায় আসবে দেশের এককোটি পরিবার। সারা দেশে স্বল্প আয়ের এককোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সারা দেশে টিসিবির মাধ্যমে জনগণকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা হবে। টিসিবির এ কার্যক্রমের আওতায় চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল কেনার বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
টিসিবি জানিয়েছে, প্রতিটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে একসঙ্গে পাঁচ পণ্যের প্যাকেট পাবেন কার্ডধারীরা। প্রতি প্যাকেটে থাকবে দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজ। সেখানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫, মসুর ডাল ৬৫, পেঁয়াজ ৩০ টাকা এবং ছোলা ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একজন কার্ডধারী রোজার আগে এবং রোজার মধ্যে দুই দফায় এসব পণ্য পাবেন। প্রথম কিস্তির পণ্য পাবেন ২০ মার্চ থেকে। দ্বিতীয় কিস্তির পণ্য দেওয়া হবে রোজার মাঝামাঝি সময়ে। এই কর্মসূচির জন্য দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ৪০ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ৪০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা এবং ২৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রয়োজন হবে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এটি সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।’