আনতারা রাইসা : এসেছে পবিত্র রজমান মাস। এই একটি মাস অন্যান্য মাসের থেকে আলাদা। মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই মাসটিতে বদলে যায় স্বাভাবিক সময়ের রুটিন। সেইসঙ্গে এবার যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের ভয়।
যে কারণে বাড়িতেই থাকছে হচ্ছে প্রায় সবাইকে। এদিকে বাড়িতে থাকলেও বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করতে হচ্ছে বেশিরভাগ কর্মজীবীকে। আবার আসছেন না গৃহকর্মীও। ভয়, ত্রাসকে দূরে সরিয়ে রেখেই রোজা পালনের পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গোটা বিশ্ব জুড়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা পবিত্র রমজান মাসে কীভাবে উৎসব পালন করবেন, তার একটি খসড়া প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, জমায়েত এড়িয়ে চলুন। নিজেরাও কোনো জমায়েত ডাকবেন না। সামাজিক বা ধর্মীয়, কোনো ধরণের জমায়েত করা বাঞ্ছনীয় নয়। তার বদলে সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে ভার্চুয়াল জমায়েত হোক। কথা চলুক ফোনে, দেখা হোক ভিডিও কলে। ধর্মীয় জমায়েত হোক টেলিভিশনের সামনে নিজের নিজের বাড়িতে, অথবা রেডিওতে ধর্মীয় বক্তব্য শুনে শেষ হোক এবারের রমজান।
এছাড়াও রমজান উপলক্ষে যেসব প্রস্তুতি এবং স্বাস্থ্য নির্দেশনা আপনি মেনে চলতে পারেন-
১। এখন তো চাইলেই বাজারে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই একবারেই বাজার করে রাখতে হচ্ছে বেশ কিছুদিনের। তাই পরিকল্পনাও সেভাবে করতে হবে। শুকনো যেসব খাবার বেশিদিন রাখা সম্ভব সেগুলো বেশি করে কিনে রাখুন। আর কাঁচা বাজার চেষ্টা করুন অন্তত সপ্তাহখানেকের জন্য কিনতে। সেগুলো প্রয়োজন অনুসারে গুছিয়ে রাখুন। একবারে সব পরিষ্কার করে কাটা-ধোয়া করে নিলে সপ্তাহখানেকের জন্য নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। ইফতারের যেসব খাবার ফ্রোজেন করা সম্ভব, সেগলো তৈরি করে ফ্রোজেন করে নিলে প্রতিদিন ঝামেলা পোহাতে হবে না।
২। নজর দিতে হবে খাবারের তালিকার দিকেও। এই সময়ে যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে ভাজাভুজি, স্ন্যাকস জাতীয় খাবার। বরং সালাদা, স্যুপ, ফলের রস এসব থাকুক ইফতারে। হালিমও খেতে পারেন। ছোলা, খেজুর তো রয়েছেই। চিড়া, দুধ, আর কলা দিয়ে তৈরি করতে পারেন দারুণ স্বাদের স্মুদি। স্বাদ বদলও হলো আবার সুস্বাস্থ্যও বজায় থাকলো।
৩। ইফতার, সেহরি এবং ইফতারের পরবর্তী সময়ে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি খাওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিশেষজ্ঞরা অন্তত ১.৫ থেকে ২ লিটার পানি খাওয়ার কথা বলে থাকেন। সুতরাং ইফতারের আগেই আপনার পানি-পরিশোধনকারী মেশিনে যথেষ্ট পরিমাণ পানি জমিয়ে রাখুন। একবারে খুব বেশি পানি পান না করে, অল্প অল্প করে বার বার খান। নয়ত আপনি অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। অনেকেই আছেন যারা শুধু পানি খেতে পছন্দ করেন না, তারা পানির সাথে লেবু কিংবা বিভিন্ন ফ্লেভার মিশিয়ে খেতে পারেন। আরো কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প হলো জিরো-ক্যালরি ভিটামিন অথবা ফ্রুট ওয়াটার।
৪। ভাজাপোড়া খাদ্য সেটা মাংস হোক আর অন্য কিছু হোক রোজা রেখে না খাওয়া ভাল।
কলিজা, মগজ, মুরগীর চামড়া খাদ্য তালিকা থেকে বাদ থাকবে। অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত যেকোন খাদ্য এ সময়ে চলবে না।
৫। ইফতার ও সেহেরীতে আঁশযুক্ত খাবার রাখা উচিত। আঁশযুক্ত খাবার হজম হতে দেরি হয়,তাই ক্ষুধা কম লাগে। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া রমজানে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য আঁশযুক্ত খাবার খুব দরকার। যেমন ঢেঁকি ছাটা চাল, সবুজ মটরশুঁটি, ছোলা, সবুজ শাক যেমন ডাঁটাশাক, পালং শাক, খোসাসহ ভক্ষণ উপযোগী ফল যেমন পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি এবং শুকনা ফল খোরমা, খেজুর ইত্যাদি ।
৬। রমজানে শরীরের খনিজ লবণের অভাব পূরণের জন্য শাকসবজি ও ফলমূল দরকার।
মসজিদে নয়, প্রার্থনা সারুন নিজের বাড়িতেই। এতেই নিজের ও প্রিয়জনের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারবেন। জাকাত বা দান করার সময় সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখুন। ইফতার পার্টি না ডেকে, খাবারের প্যাকেটের ব্যবস্থা হোক, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা ততটা নেই। কোনো সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি