প্রায় মাসখানেক ধরে ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদল হিজবুল্লাহ। অন্যতম সিনিয়র কমান্ডারকে হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এমন হুমকি দিয়ে আসছিল গোষ্ঠীটি। অবশেষে ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা করেছে তারা। তবে ইসরায়েলও আগেভাগে ইরানপন্থী গোষ্ঠীটির ওপর হামলা চালিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে। এ ঘটনার জেরে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেশ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, প্রায় ১০০টি যুদ্ধবিমান রোববার সকালে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে আগেভাগে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। তারপর উত্তর ইসরায়েলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে হিজবুল্লাহ। যদি ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সংখ্যাটি সঠিক হয় তাহলে ২০০৬ সালে দু’পক্ষের সর্বাত্মক যুদ্ধের পর এবারই তেল আবিবের তরফ থেকে লেবাননে সবচেয়ে বড় হামলা হলো।
স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ইসরায়েল এ হামলা করেছে। তাদের দাবি, আধা ঘণ্টা পর ভোর ৫টার দিকে হিজবুল্লাহ বড় আকারের হামলার পরিকল্পনা করেছিল।
ইসরায়েলি এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববারের হামলার মধ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শহর তেল আবিবে রকেট হামলার বিষয়টিও ছিল। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ বলেছে, উত্তর ইসরায়েলে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে তিন শতাধিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছেন তাদের যোদ্ধারা।
এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানায়, গত ৩০ জুলাই বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহতের জবাবের প্রথম ধাপে এই হামলা করা হয়েছে। তাছাড়া পর দিন ইরানের রাজধানী তেহরানে হামলায় হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলেও জানিয়েছে ইরান, হিজবুল্লাহ ও হামাস।
তখন থেকেই ইরান ও হিজবুল্লাহর তরফ থেকে পাল্টা আঘাত যে আসছে তা সবাই আঁচ করেছিলেন। বলা যায়, এজন্য সবাই অপেক্ষা করে ছিলেন। তবে ইরানের তরফ থেকে এখনো কোনো পাল্টা আঘাত না আসলেও রোববারের হামলাকে হিজবুল্লাহর প্রথম বড় প্রতিশোধ বলে মনে করা হচ্ছে।
সামনে কী হবে
আপাতত হিজবুল্লাহ বলেছে, ফুয়াদ শুকর হত্যার প্রতিশোধের প্রথম পর্ব শেষ করেছে তারা। তবে ইসরায়েলে এই হামলায় তুলনামূলক ‘সামান্য’ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উভয় পক্ষে হতাহতের ঘটনাও কম। ইসরায়েলের দাবি, তারা হিজবুল্লাহর একটি বড় হামলা সফলভাবে ঠেকিয়ে দিতে পেরেছে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ যে পাল্টাপাল্টি হামলা করে আসছে, সেটি কি আরও নিয়মিত হয়ে উঠবে? নাকি রোববারের ঘটনা আরও বিপজ্জনক কিছুর দিকে নিয়ে যাবে?
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ নেতারা বলছেন, তারা আরেকটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চান না। তবে মুখে এমনটা বললেও যুদ্ধের জন্য দু’পক্ষই প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এমনটা হলে হিজবুল্লাহকে ঠেকানো ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের জন্য মোটেই সহজ হবে না। কারণ, হামাসের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হিজবুল্লাহ। তাদের কাছে দেড় লাখের মতো রকেট আছে। সেই সঙ্গে তাদের কাছে সমগ্র ইসরায়েলে তাণ্ডব চালাতে পারে এমন অস্ত্রও আছে। তাছাড়া এই প্রতিরোধ যোদ্ধারা হামাসের চেয়ে ভালো প্রশিক্ষিত ও সজ্জিত। তাদের কেউ কেউ সিরিয়ার যুদ্ধে পর্যন্ত লড়েছে।