আনতারা রাইসা: গত কয়েক বছর ছিল ডিসি কমিক্স আর মার্ভেলের হলিউডি মাঠ দখলের লড়াই। বক্স অফিস বলছে সেই লড়াইয়ে বেশ বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে প্রয়াত স্ট্যান লি এর মার্ভেল। এই বছর ও একাধিক ছবি মুক্তি দিয়েছে এই দুটি বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তবে হলিউড বলতে শুধু এই সুপারহিরোদেরই তো বোঝায়না। মুক্তি পেয়েছে বেশ কিছু রক্ত মাংসের গড়া মানুষদের জীবন নিয়েও ছবি।
এসেছে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্ছাইজি গুলোর নতুন নতুন পর্ব। এই বছরে এনিমেশন ছবি গুলো ও কিন্তু পিছিয়ে নেই। অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে বেশ ভালভাবেই ব্যবসা করেছে বক্স অফিসে। দেখা গিয়েছে নিকোল কিডম্যান, রবার্ট ডি নিরোর মতো শক্তিশালী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ও। এই বছরের আলোচিত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জোকার, টয় স্টোরি ৪, ওয়ানস আপন আ টাইম ইন হলিউড, ম্যারিজ স্টোরি, আইরিশ ম্যান , আলাদিনের মত ছবিগুলো। তবে কোন সেরা ৩ ছবি মাতিয়েছে এবারের হলিউড বক্স অফিস? চলুন জেনে নেয়া যাক।
৩। স্পাইডার ম্যানঃ ফার ফ্রম হোম
এখন পর্যন্ত তালিকার ৩ নম্বরে আছে মার্ভেলেরএই ছবিটি। নতুন স্পাইডার ম্যান হিসেবে এরই মধ্যে হিট হয়েছেন টম হল্যান্ড। কম বয়সী এই স্পাইডার ম্যান শুরু থেকেই দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’ ছবিতে তাঁর মৃত্যু অনেক ভক্তের মধ্যে হাহাকার তুলেছিল।
স্পাইডার-ম্যান: ফার ফ্রম হোম- নামই বলে দেয় চিরচেনা পরিবেশ থেকে মুক্তি চায় পিটার। কিন্তু সে চাইলে কী হবে? নিয়তির তো অন্য পরিকল্পনা থাকতেই পারে! এ নিয়েই ফেজ থ্রি সমাপ্তির এই কিস্তি।
গত ২৬ জুন হলিউডে প্রিমিয়ার হলেও জাপান ও চীনে বিশাল বাজারে মুক্তি পায় ২৮ জুন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ২ জুলাই; ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্ববাজারের হলে প্রদর্শিত হয় ৫ জুলাই। মুক্তির পরপরই হলগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন দর্শকেরা। পুরো বিশ্বজুড়ে প্রায় ১.১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার পকেটে পুরে নেয় এই ছবিটি।
তবে এই ছবির শেষে বেশ কিছু প্রশ্ন উসকে দেয়া হয়েছে দর্শকদের উদ্দেশ্যে। ক্যাপ্টেন আমেরিকা কি আসলেই মারা গেছেন? কুয়েন্টিন বা মিস্টেরিও কি আসলেই মারা যায়? তদের দল কোথায় ছিল? মাল্টিভার্সের উপস্থিতি কি আসলেই ছিল?
এই প্রশ্ন গুলো জানতেই দেখতে হবে বছরের এই অন্যতম সেরা ছবিটি। যদি এখনই দেখা না হয়ে থাকে তবে আর দেরি কেন?
২। দ্য লায়ন কিং
১৯৯৪ সাল। ‘দ্য লায়ন কিং’-এর প্রথম আবির্ভাবের বছর। সে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। ডিজনির ছবি ঠিকই, কিন্তু মৌলিক গল্প, সঙ্গে শেক্সপিয়ারীয় নাটকীয়তার ছায়া, এবং মায়াময় আফ্রিকার জাদু মাখানো এক মনুষ্যত্বের কাহিনী।গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একগুচ্ছ পশুপাখি, যাদের ভালো না বেসে থাকা যায় না। এদের মধ্যে একজন ক্ষমতার আলোয় উদ্ভাসিত এক প্রতাপশালী রাজা, আরেকজন প্রথাগত অন্ধকারে বিচরণ করা আদ্যোপান্ত এক খলনায়ক।
এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে এই বছর ১৯ জুলাই। মুক্তির পরপরই এটি দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এখন পর্যন্ত পুরো বিশ্ব জুড়ে এর আয় ১.৬৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বক্স অফিসে এই ছবিটি আছে তালিকার ২ নম্বরে।
তবে এর পরিচালক এই ক্ল্যাসিক ছবিতে এনেছেন ভিন্ন মাত্রা। প্রতিটি চরিত্রকেই তিনি বাস্তবের মত করে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। এই স্টুডিওরই ‘দ্য জাঙ্গল বুক’-এর রিমেক দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ফ্যাভরো। ‘দ্য লায়ন কিং’-এ আরও এক ধাপ এগিয়েছে প্রযুক্তি, যাতে সিম্বা বা মুফাসার অত্যাশ্চর্য কেশরের প্রতিটি আলাদা আলাদা চুল দেখতে পাবেন আপনি। তাছাড়াও এমন এক ‘লায়ন কিং’, যার প্রতিটি মুখ্য চরিত্রের নেপথ্যে এবার রয়েছে কোনও কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা অথবা বেয়ন্সের মতো তারকার কণ্ঠস্বর, সেই ছবি সেরা তালিকায় থাকবে এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। তাই এত বছর পরেও তাদের এই অমলিন জাদুতে তারা মাতিয়ে রেখেছিলেন বক্স অফিস।
১। এভনেজারস এন্ড গেম
‘লাভ ইউ, থ্রি থাউজেন্ড’
অ্যাভেঞ্জারস: এন্ডগেমে আয়রনম্যানের এই এক সংলাপই কাঁদিয়েছে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি বক্স অফিসকে নিয়েও দারুণ খেলা খেলেছে মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের এই মহারণ! বক্স অফিসে যা-ই হোক, চলচ্চিত্রানুরাগীদের ভাঙা মনের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
ভক্তদের একবছরের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার প্রহরশেষে গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়েছিল অ্যাভেঞ্জারস সিরিজের চতুর্থ পর্ব, ‘অ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেম’। ২০০৮ সালের ‘আয়রন ম্যান’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা অ্যাভেঞ্জার যুগের শেষ হলো অবশেষে। মার্ভেলের ভবিষ্যতের প্রজেক্টগুলোতে যুক্ত থাকবেন কেউ কেউ। কিন্তু আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর, হাল্ক, ব্ল্যাক উইডো, হক আই- এই ছয় অরিজিনাল অ্যাভেঞ্জারকে রিবুট ছাড়া আর কখনো একসাথে দেখা যাবে না।
ছবিটির সেরা একটি দৃশ্য ছিল থানোসের বিরুদ্ধে অ্যাভেঞ্জারের মূল ট্রিনিটির লড়াই। সেসময়ে থানোসের বিরুদ্ধের ম্যিয়লনির নিয়ে ক্যাপ্টেন আমেরিকার লড়াই নিঃসন্দেহে গোটা মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। গোটা ইউনিভার্সে সমতা আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া প্রবল পরাক্রমশালী থানোসকে কখনো বর্বর ভিলেনরূপে, আবার কখনো ভগ্নদশায় দেখা গেছে এখানে। সিজিআই মুখোশের আড়ালে থেকেও মার্ভেল ইউনিভার্সের সেরা ভিলেনটিকে আশ্চর্য নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন জশ ব্রোলিন।
৩৫৬ মিলিয়ন ডলার বাজেটের মুভিটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তেই বিশ্বব্যাপী আয় করে নেয় ১.২ বিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে দ্রুততম বিলিয়ন ছোঁয়ার ক্ষেত্রে ইনফিনিটি ওয়ার মুভির রেকর্ড ভেঙে ফেলে অনায়াসেই। এখন পর্যন্ত পুরো বিশ্বজুড়ে এর আয় প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ছবিটি পরিচালনা করেছেন এন্থনিও রুশো ও জো রুশো। ছবিটিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, ক্রিস ইভান্স, জোশ ব্রোলিন, স্কারলেট জোনাসন সহ আরো অনেকে।
অনলাইন নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি