আনতারা রাইসা : প্রখ্যাত অভিনেতা ইরফান খানের মৃত্যুর পর ই বলিউডে হল আরেক নক্ষত্রের পতন। তিনি আর কেউ নন, প্রবীণ অভিনেতা ঋষি কাপুর। ৬৭ বছরের ঋষি ক্যানসারে ভুগছিলেন। রাজ কাপুরের দ্বিতীয় পুত্র ঋষি ১৯৭৩ সালে বাবার হাত ধরে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
কয়েক প্রজন্ম ধরে বলিউড চলচ্চিত্রে রাজত্ব করা কাপুর পরিবারে সন্তান ঋষির জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, মুম্বাইয়ে। তার বাবা রাজ কাপুর ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত অভিনেতা ও পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম। বাবার পরিচালিত ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে ঋষির যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাকে প্রথম দেখা যায় শ্রী ৪২০ ছবির জনপ্রিয় গান ‘পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া’য় শিশুশিল্পী হিসেবে।
১৯৭০ সালে বাবার নির্মিত ছবি ‘মেরা নাম জোকার’ এ রাজ কাপুরের শিশু বয়সের চরিত্রে অভিনয় করে সেরা শিশু শিল্পীর পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। এর তিন বছর পর ‘ববি’ চলচ্চিত্রে মূল ভূমিকায় অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি পান। এর পরের কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি ওই সময়ের শীর্ষ রোমান্টিক নায়কে পরিণত হন।
২০১২ সালে ‘অগ্নিপথ’ ও ২০১৮ সালে ‘মুলুক’ চলচ্চিত্রে নিজের ভূমিকায় অভিনয় তার জীবনের অন্যতম সেরা কাজ ছিল বলে ধারণা চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের।
সিনেমার জন্যই যেন তার জন্ম হয়েছিল। কখনো স্ত্রীর হাতে খুন হওয়া স্বামী, কখনো মদ্যপ প্রেমিক নানা ভুমিকায় অভিনয় করে তিনি দর্শকদের মাতিয়েছেন।
১৯৮০ সালের ‘কার্জ’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন সুভাষ ঘাই। স্ত্রীর দ্বারা হত্যার শিকার এক যুবকের পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসার গল্প এটি। এখানে ঋষি কাপুরের চরিত্রটির নাম মন্টি। এই সিনেমাটিই ঋষিকে এনে দেয় রাজ্যের জনপ্রিয়তা।
হাম কিসিসে কম নেহি’ সিনেমাটি ঋষি কাপুর অভিনিত সিনেমাগুলোর অন্যতম। একশন কমেডি ঘরানার সিনেমাটি রিলিজ পায় ১৯৭৭ সালে। এর পরিচালনায় ছিলেন নাসির হুসাইন। স্মাগলারের পুত্রের চরিত্রে ভালোই মানিয়েছে ঋষি কাপুরকে।
১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ববি’। ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে নবাগত ঋষির জুটি সুপারডুপার হিট। ববির পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লেগেছিল। এই ছবি তাঁকে শক্ত জমি দিয়েছিল। তবে এও শুনতে হয়েছে, ছেলেকে লঞ্চ করার জন্যই রাজ কপূর এই ছবি বানিয়েছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য হল ছবিগুলো ‘লায়লা মজনু’, ‘রফু চক্কর’, ‘সরগম’, ‘কর্জ’, ‘প্রেম রোগ’, ‘নাগিনা’, ‘হনিমুন’, ‘চাঁদনি’, ‘বোল রাধা বোল’ এবং ‘হিনা’।
অভিনয়ের দ্বিতীয় পর্বে অনেক বেশি সাফল্যের পালক বসেছিল ঋষি কপূরের শিরোপায়। নায়কের ভূমিকা থেকে সরে গিয়ে তখন ঋষি বেছে নিতেন চরিত্রাভিনয়। বা, কখনও কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে খলনায়কের ভূমিকাতেও। ডি ডে’, ‘মুলক’,‘ইয়ে হ্যায় জলওয়া’, ‘হাম তুম’, ‘ফনা’, ‘নমস্তে লন্ডন’, ‘লভ আজ কাল’, ‘পটিয়ালা হাউস’, ‘হাউসফুল টু’, ‘১০২ নট আউট’, ‘ঝুটা কহিঁ কা’, ‘জব তক হ্যায় জান’ ছবিতে যেন নতুন করে ধরা দেন অভিনেতা ঋষি।
অভিনয় জীবন তাঁকে যশ খ্যাতির পাশাপাশি দিয়েছে জীবনসঙ্গিনীকেও। ১৯৮০ সালে তিনি বিয়ে করেন নীতু সিংহকে। মোট ১৫টি ছবিতে নীতু ছিলেন তাঁর নায়িকা। বিয়ের পরে কপূর পরিবারের ধারা মেনে স্বেচ্ছায় অভিনয় ছেড়ে দেন নীতু। ক্যানসারের বিরুদ্ধে ঋষির যুদ্ধে প্রথম থেকে পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী নীতু। ২০১৮ সালে তাঁরা দু’জনে দীর্ঘ দিন নিউ ইয়র্কে ছিলেন। সেখানেই চলছিল ঋষির চিকিৎসা। গত বছর তাঁরা ফিরে আসেন দেশে। বোন ম্যারোর ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যতটা ছিল ঋষির, ততটাই ছিল নীতুর।
‘চকোলেট বয়’ ইমেজের আড়ালে লুকিয়ে ছিল হার-না-মানা যোদ্ধা। অভিনয় জীবনে সে কথা প্রমাণ করার সুযোগ বেশি বার দেননি পরিচালকরা। জীবনমৃত্যুর লড়াইয়ে বোধহয় সেই পরীক্ষা দিয়ে গেলেন ঋষি। দেখিয়ে গেলেন, আদতে তিনিও এক জন ফাইটার।
নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি