লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনাএবং ৪৩ জন চীনের সেনা নিহত হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে। নিহত ভরতীয় সেনাদের মধ্যে একজন কর্নেল পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। তিনি বিহার রেজিমেন্টের অফিসার ছিলেন। বেজিং প্রশাসনের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের প্রধান সম্পাদক টুইট করে জানিয়েছেন, ”চীনের সেনাও মারা গিয়েছেন।” আর রিপোর্টার ওয়াং ওয়েনওয়েন টুইট করে বলেছেন, ”চীনের পাঁচজন সেনা মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ জন।” তবে চীনের সরকার বা সেনার তরফ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এ দিকে এএনআই-য়ের দাবি, চীনের রেডিও ইন্টারসেপ্ট করে ভারতীয় সেনা জানতে পেরেছে অন্তত ৪৩ জন চীনের সেনা নিহত হয়েছেন। আহত বহু। আরও বেশ কিছু ভারতীয় সেনা াহত বলেও জানা গিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। লাদাখের গ্যালওয়ান উপত্যকায় দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। এক পক্ষ অন্যপক্ষকে লক্ষ্য করে পাথরও ছুড়তে থাকে। ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু সৈন্য আহত হন। পরে দুই পক্ষের বেশ কিছু সেনার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে লাদাখ সীমান্তেই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছেন দুই দেশের সেনা কর্তারা।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, চীনের সেনা গালওয়ানে পয়েন্ট ১৪-তে ভারতীয় এলাকায় ভিতরে ঢুকে টেন্ট খাটিয়েছিলেন। ভারতীয় সেনারা প্রহরা দেওয়ার সময় তা দেখতে পান এবং টেন্ট সরিয়ে দেন। চীনের সেনারা ছিলেন পাহাড়ের ওপরে। তাঁরা প্রথমে পাথর ছোড়ে। তারপর রড নিয়ে নেমে আসেন। শুরু হয় হাতাহাতি। দুই পক্ষেরই বেশ কিছু সেনা গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
যে জায়গায় হাতাহাতি হয়েছে, সেখানেই দিন কয়েক আগে দুই সেনার কম্যান্ডাররা বৈঠক করেছিলেন। ভারতীয় এক সেনা অফিসার বলেছেন, ”চীন সম্ভবত পরিকল্পনামাফিক এই কাজ করেনি। কিন্তু তাঁরা ভাবতে পারেননি, ভারতীয় জওয়ানরা নিজেদের এলাকা রক্ষার জন্য এইভাবে ঝাঁপাবেন।
এদিকে এই ঘটনার পরে স্থল, জল এবং বায়ুসেনার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার গোটা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে ভারত।
গত মাসেই ভারত এবং চীনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। প্রথমে সিকিম সীমান্তে পরে লাদাখে দুই পক্ষের সেনা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এর আগে বছরখানেক আগে ডোকালমে একই ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এ বার ঘটনার রেশ আরও বহু দূর গড়ায়। চীনের প্রেসিডেন্ট দেশের সৈন্যবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। লাদাখ সীমান্তে দুই পক্ষই অস্ত্র, সেনা এবং ফাইটার বিমান জড়ো করতে শুরু করে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, কার্যত যুদ্ধের আবহাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়েই চীন এবং ভারতীয় সেনার কোর স্তরের অফিসাররা দীর্ঘ বৈঠক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। ধীরে ধীরে সীমান্ত থেকে অস্ত্র সরানো শুরু হয়। সেই পর্বেই নতুন করে এই সংঘাতের ঘটনা।
চীনের অভিযোগ, ভারতীয় সেনা লাইন অফ কন্ট্রোল পার করে চীনে ঢুকে পড়েছিল। একই অভিযোগ ভারতেরও। তবে সেনা সূত্র জানাচ্ছে, কোনও পক্ষই গুলি ছোড়েনি। হাতাহাতি এবং পাথরবৃষ্টিতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রাতের দিকে জানা যায়, দুই পক্ষের হাতেই রড ছিল। বেয়োনেট ব্যবহার করা হয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ফের বৃদ্ধি পাবে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে ভারত এবং চীনের মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষ হয়নি। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেনি। সূত্র: ডয়েচে ভেলে