চীনের শিনজিং প্রদেশে উইগুর মুসলিমদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে বিশেষ পদক্ষেপ নিল অ্যামেরিকা। ওই প্রদেশের চারজন উচ্চপদস্থ চীনা রাজনীতিক এবং আধিকারিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, পরিকল্পনা করে ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হয়েছে একটি সম্প্রদায়ের উপর। অ্যামেরিকা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করল।
সূত্র জানাচ্ছে, শিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ১০ লাখ উইগুর মুসলিমকে আটক করে রেখেছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। তাদেরকে ক্যাম্পে বন্দি করা হয়েছে। চীন অবশ্য বন্দি শব্দটিতে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, উইগুরদের মনোজগৎ থেকে জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন করতেই তাদের ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’র ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ক্যাম্প থেকে পালানো উইগুরদের বক্তব্য, সেখানে তাঁদের উপর নানা অত্যাচার চালানো হয়েছে। জোর করে, অত্যাচার চালিয়ে অপরাধ স্বীকারের ফর্মে সই করতে বাধ্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য স্টেরিলাইজও করা হচ্ছে ক্যাম্পে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের বক্তব্য, যে কায়দায় চীন এ কাজ করছে, তাতে একটি গোটা সম্প্রদায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
শিনজিয়াং প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং পলিটব্যুরো সদস্য চেন কুয়ানগুও এবং তাঁর সহকর্মীরা এই গোটা বিষয়টির রূপকার। অ্যামেরিকা এই চেনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ছাড়াও শিনজিয়াংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক ওয়াং মিনশাং, ওই প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ জু হাইলুন এবং প্রাক্তন নিরাপত্তা আধিকারিক হুয়ো লিউজুনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। অ্যামেরিকা জানিয়েছে, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনওরকম আর্থিক লেনদেন অপরাধ বলে চিহ্নিত হবে। শুধু তাই নয়, অ্যামেরিকায় এই ব্যক্তিদের কোনও সম্পত্তি থাকলে তা আপাতত ফ্রিজ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এই চার ব্যক্তির বাইরেও শিনজিয়াংয়ের বেশ কিছু কমিউনিস্ট নেতাকে ভিসা দেওয়া হবে না বলে মার্কিন সূত্র জানাচ্ছে।
চেন কুয়ানগুও এর আগে দীর্ঘ দিন তিব্বতে দায়িত্ব সামলেছেন। সেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের উপরেও একই রকম নির্যাতন তিনি চালিয়েছিলেন বলে কোনও কোনও মহলের বক্তব্য। বস্তুত, চীন যতই কারিগরি শিক্ষার কথা বলুক, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, হিজাব পরলেই ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আরব বিশ্বের সঙ্গে কারও যোগাযোগ থাকলেও তাঁকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। দিনের পর দিন চলে অত্যাচার। তিব্বতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও দীর্ঘদিন ধরে একই রকম অত্যাচারের কথা বলছেন।
বস্তুত, উইগুরদের উপর এই অত্যাচার নেমে এসেছে ২০০৯ সালের এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর। সেই দাঙ্গায় কমপক্ষে ১৪০ জন নিহত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ওই অঞ্চলে ক্যাম্প তৈরি শুরু হয়।
এ দিকে চীনের এই উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং রাজনীতিকদের উপর অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তলানিতে যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা-কালে এমনিতেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। হংকংয়ের ঘটনা নিয়েও চীনের তীব্র বিরোধিতা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। তার উপর এই নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতি আরও জটিল করবে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। সূত্র: ডয়েচে ভেলে