ত্রিপুরা রাজ্যে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে মৌলভীবাজার জেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছে। যার কারণে নদী তীরবর্তী লোকালয়ের ৪৭টি ইউনিয়নের প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।
ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার গণমাধ্যম কর্মী মো. মোসাহিদ আলী মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, গত কয়েকদিন ত্রিপুরার রাজ্যের কৈইলাশহর ও আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এই বৃষ্টির পানি আবার বাংলাদেশের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও খোয়াই নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পতিত হয়। গতকাল বুধবার সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। আজ আকাশ মেঘে ঢাকা যেকোনও সময় বৃষ্টি পড়বে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বেলা ১১টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজার জেলার মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধলাই নদীর পানি কমছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, মনু নদীর পানি রেলওয়ে ব্রিজে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, চাঁদনীঘাট ব্রিজে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী শেরপুর ব্রিজে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদী পানি বিপদসীমার ২০৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিশেষ করে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বাড়িঘরে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ও ফতেহপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর এলাকা, রাজনগর ও সদর কুশিয়ারি নদীর পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে। শ্রীমঙ্গল নিচু এলাকায় ভারী বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ধলাই নদীর লাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের তিন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম ও পৌরসভার ড্রেন দিয়ে পানি প্রবেশ করে দুটি মাধ্যমিক স্কুল এবং তিনটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। এতে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধলাই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, বন্যাকবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় দুই লাখ ৮১ হাজার ৯২০ জন মানুষ পানিবন্দি আছেন। ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ছয় হাজার ২৫৩ জন মানুষ আশ্রয়গ্রহণ করেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে ২০০টি গবাদিপশু রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির ১০ লিটারের ২৪০টি বোতল বন্যা উপদ্রুত এলাকা সরবরাহ করা হয়েছে।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ৬৫ হাজার সরবরাহ করা হয়েছে। ৭০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। জেলায় ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে ৪২২ মেট্রিক টন।
নগদ দুই লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, শুকনো খাবার ৪৬৫ প্যাকেট ও অন্যান্য রান্না করা খাবার ১২০০ প্যাকেট বিতরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন বলেন, চার হাজার ৩০০ হেক্টর আউশ ও ৮৫২ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে আছে।
মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ সিরাজী বলেন, জেলায় ৬৫টি পুকুর ও খামার- যার আয়তন ৪৭ হেক্টর। এসব পুকুর ও খামারের বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে।